ইসলাম কি যাচাই করার সুযোগ দেয়?

by AHMED RAHAT

ভূমিকা

ইদানিং অনেক মুসলিমকে বলতে শোনা যায়, তারা নাকি মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করে এরপরে অনেক গবেষণা এবং যাচাই বাছাই করে ইসলামের সত্যতা বুঝতে পেরেছে। একই কথা অনেক বিতর্কের সময় ধার্মিক হিন্দুরাও বলে থাকেন যে, তারাও নাকি হিন্দু পরিবারে জন্ম নিয়ে খুব যাচাই বাছাই করে, গবেষণা করে এরপরেই হিন্দু ধর্মের সত্যতা বুঝতে পেরেছে। খ্রিস্টান ইহুদি বৌদ্ধ সকলেরই একই কথা। বেশিরভাগ মানুষই যাচাই বাছাই গবেষনা করেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ধর্মটির সত্যতাই আবিষ্কার করেন। বিষয়টি একইসাথে হাস্যকর এবং মর্মান্তিক। এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার আগে কগনিটিভ বায়াস কাকে বলে, তা খানিকটা আলোচনা করে নেয়া প্রয়োজন।

কগনিটিভ বায়াস অর্থ হচ্ছে জ্ঞানীয় পক্ষপাত যা আসলে আরোহী যুক্তির একটি পদ্ধতিগত ভুল। মানুষের আবেগ, পূর্ব থেকে নিয়ে আসা বিশ্বাস, পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ধর্ম, ছোটবেলা থেকে শিখে আসা সংস্কার, এইসবই তার সামনে থাকা তথ্যপ্রমাণগুলোর মধ্যে গ্রহণ বর্জনের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। অর্থাৎ সে যা শুনতে চায়, যা শুনলে সে আনন্দিত হয়, যা তার বিশ্বাসকে স্বস্তি দেয়, সেই ধরণের তথ্য প্রমাণ সম্পর্কে অবচেতনভাবেই তার পক্ষপাত। একজন ব্যক্তি যখন বিষয়ীগতভাবে তথ্য সংগ্রহ বা স্মরণ রাখে, তখন তার পূর্ব ধারণা বা সংস্কার বা বিশ্বাসের সাথে যা মিলে যায়, সেই সব তথ্যের প্রতি তার এক ধরণের পক্ষপাত থাকে। তার মধ্যে তাড়না থাকে যে, সে যেই মতবাদ বা বিশ্বাস লালন করে, সেগুলো যেন সত্য প্রমাণ করা যায়। শুধুমাত্র সেইসবের পক্ষে থাকা তথ্যপ্রমাণই তার কাছে সত্যিকারের তথ্যপ্রমাণ বলে মনে হয়। অপরদিকে, যেসব তথ্য প্রমাণ তার মতবাদ বা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায়, তা যত শক্তিশালী বা স্পষ্টই হোক না কেন, সে সেগুলো এড়িয়ে যায় বা সেগুলো প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টা করে। তথ্যপ্রমাণ থেকে যতটুকু তার পক্ষে গেছে, সেগুলো সে কাজে লাগায় এবং মনে রাখে তার বিশ্বাস বা মতবাদকে আরও শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এই প্রবণতাটিই হলো ‘কনফার্মেশন বায়াস’ বা ‘কগনিটিভ বায়াস‘, যা একটি ভুল পদ্ধতি।

বিজ্ঞানীগণ গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ পেয়েছেন যে, মানুষের মস্তিষ্ক হচ্ছে একটি প্যাটার্ন রিকগনাইজিং মেশিন। অর্থাৎ সে প্রতিনিয়ত প্যাটার্ন খোঁজে। সে যখন মেঘের দিকে তাকায়, সে মাঝে মাঝেই ঘোড়া, হাতি কিংবা কোন মানুষকে দেখতে পায়। কিন্তু সেই মেঘটি হয়তো আদতে কোন ঘোড়া বা হাতি বা মানুষের মত আকৃতির নয়। কিন্তু তার মস্তিষ্ক যেহেতু প্যাটার্ন খোঁজে, সে মেঘের মধ্যে এরকম কিছু না কিছু বের করেই ফেলে। একইভাবে, মস্তিষ্ক সবসময় আপনার বিশ্বাসকে দৃঢ় করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সেই সব স্মৃতি আপনাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, যা আপনাকে আনন্দ দেয়। এই আনন্দটুকু পেলে আপনার মন ভাল হয়ে যায়, সেই প্রক্রিয়াটি বুঝতে পেরে আপনার মগজ কাজটি বারবার করে, নিজেকে আনন্দ দেয়ার চেষ্টায়। এই কারণে, আপনি যখন অনেকগুলো তথ্যপ্রমাণ পড়েন, তার মধ্যে সেইগুলোই আপনার মস্তিষ্কে বেশি বেশি বার এক্সেস হয়, যেই সব স্মৃতি আপনি বারবার মনে করেছেন। আর এই কারণেই আপনার ভেতরে কনফার্মেশন বায়াসের উদ্ভব ঘটে।

যাইহোক, আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, ইসলাম কী আসলে অন্য ধর্মসমূহ যাচাই বাছাই করে, যুক্তি বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে সঠিক ধর্মটি বেছে নেয়ার অনুমতি দেয় কিনা।

পারিবারিক ধর্ম

আমরা প্রায় সব মানুষই কোন একটি পরিবারে জন্ম নিই। স্বাভাবিকভাবেই, সেই পরিবারের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়েই আমরা বড় হয়ে উঠি। বাবা মা যদি আমাদের শেখায় যে, আল্লাহই একমাত্র ঈশ্বর, কোরআনই একমাত্র সত্য, তাহলে সেইসব বিশ্বাস করেই বড় হই। বাবা মা যদি হিন্দু হয়, আমরাও হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস নিয়ে বড় হই। তারা যেই ধর্মের শিক্ষাই আমাদের দেন, সেই শিক্ষা নিয়েই আমাদের মন মানসিকতা গড়ে ওঠে। ঈশ্বর সম্পর্কে, ধর্ম সম্পর্কে আমাদের ধারণা উনারাই বেশ ভালভাবে তৈরি করে দেন। ঈশ্বরের কেমন হওয়া উচিৎ, ঈশ্বরের মূর্তি থাকা উচিৎ কী অনুচিত, ঈশ্বর একজন নাকি একাধিকজন, ধর্মে কী থাকা উচিৎ, সেইসব বিষয়ে সবচাইতে বেইসিক ধারণা আমরা পাই পরিবার থেকেই। এরপরে এলাকার বন্ধুরা, আত্মীয় স্বজন, নানানানী দাদাদাদী চাচাচাচী মামামামী, এরা আমাদের নানান ধর্মীয় গল্পকেচ্ছা বলে। স্কুলের শিক্ষকগণ আমাদের ধর্মের বিভিন্ন ব্যক্তির গল্প বলেন। এই সবের ওপর ভিত্তি করেই আমাদের ধারনা তৈরি হয়। বাঙলাদেশে একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে এবং মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে থাকলে আশেপাশের সবাই একজনকে ইসলাম ধর্মের সত্যতা সম্পর্কেই বলবে, এবং অন্য ধর্মগুলো যে কত মিথ্যা আর বিকৃত সেটিই বলবে। ভারতে হিন্দু পরিবারে জন্ম নিলে এবং হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলে থাকলে আশপাশের সবাই হিন্দু ধর্ম যে কত পুরনো এবং সঠিক, সেটিই বলবে। এরকম সবদেশেরই একই চিত্র।

একইভাবে, কোন দেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে সংবাদপত্র, রেডিও টিভি ইত্যাদিতেও মুসলিমদের পছন্দের নাটক সিনেমা প্রচারিত হবে। আবার হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে টিভিতে প্রচার হবে রামায়ন বা মহাভারত। খ্রিষ্টান বা ইহুদী বা বৌদ্ধদের দেশেও একই অবস্থা। এসব দেখে শুনে বড় হতে হতে এই বিষয়গুলোকেই একজন মানুষ সত্য মনে করে বড় হবে। ছোটবেলার শিক্ষা মানুষের মনে খুব গভীর প্রভাব ফেলে। ছোটবেলায় শেখা খুব সাধারণ জিনিসও আমরা বহুকাল মনে রাখি।

আশপাশের মোটামুটি সবাই যদি আমাদের শেখান যে, দেবদেবী আছে, আমরা সেইভাবেই চিন্তা করতে শিখি। তারা যদি আমাদের শেখান আল্লাহ বা যীহোভা আছে, আমাদেরও সেইগুলোই সত্য বলে মনে হয়। তারা যদি ছোটবেলা থেকে আমাদের মূর্তি পুজা করতে শেখান, সেই কাজটিই আমাদের কাজে যৌক্তিক এবং স্বাভাবিক মনে হয়। তখন যদি আমাদের মুসলিম বন্ধুরা আমাদের বলে, তাদের আল্লাহকে দেখাই যায় না, তখন আমাদের খুব হাসি পায়। মনে হয়, এ আবার কেমন ঈশ্বর রে বাবা, দেখাই যায় না। নাই ঈশ্বরকে আবার কেমন পুজা?

আবার, আমরা যদি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিই, আমাদের ধারনা দেয়া হয় যে, ঈশ্বর বা আল্লাহকে কেউ দেখতে পায় না। তখন আমাদের হিন্দু বন্ধুরা যখন দেবদেবীর ছবি আমাদের দেখায়, বা আমরা কোথাও মূর্তি দেখি, আমাদের খুব হাসি পায়। মনে মনে বলি, এ আবার কেমন ঈশ্বর রে বাবা, এদের ঈশ্বরকে আবার দেখা যায়। এদের চারটা হাত, দুইটা মাথা, কারো কারো আবার হাতির মাথা, কী হাস্যকর! এই ঈশ্বরগুলো তো একদমই মানুষের মত, বা জীবজন্তুর মত। হাতির মাথা ওয়ালা তো ছাড়, কয়েকটা আরো বেশি উদ্ভট দেখতে। দশ হাত তিন মাথা, এগুলো কী উদ্ভট ধর্ম রে বাবা।

কিন্তু এই আমরাই যদি ঘটনাক্রমে ঐ ধর্মের পরিবারে জন্ম নিতাম, তাহলে আমাদের ছোটবেলা থেকে সেই শিক্ষাটিই দেয়া হতো। এবং সেগুলোই আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হতো। যেমন ধরুন, আমি একটি বাঙালি পরিবারে জন্ম নিয়েছি। আমার কাছে বাঙলা ভাষাটা খুবই সহজ এবং এরকম ভাষাকেই আমার মনে হয় দারুন! যখন জার্মান ভাষা শিখতে শুর করলাম, তখন মনে হতো, কী উদ্ভট ভাষা রে বাবা! আবার একজন জার্মানও যখন বাঙলা ভাষা শিখতে যাবে, তার কাছেও ঐ ভাষাটি উদ্ভট মনে হতে পারে। আবার ধরুন, আমাদের সংস্কৃতিতে ঈদের দিনে পাঞ্জাবি পড়ে অন্য বাসায় বেড়াতে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু অন্য দেশের বা অন্য সংস্কৃতিতে আবার এইরকম উৎসবের দিনে মানুষ রাস্তায় নেমে নাচগান করে। ঐসব দেখলে আমাদের উদ্ভট মনে হয়। আবার, তারা যখন আমাদের আচার আচরণ দেখে, তাদের কাছেও সেটি উদ্ভট মনে হয়। এসবের কারণ হচ্ছে, ছোটবেলা থেকে আমরা যেই পরিবেশে বড় হই, সেই সংস্কৃতিই আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়।

মাঝে মাঝে আমাদের মনে ধর্ম বিষয়ে নানা প্রশ্ন জাগে। আমরা আমাদের ধর্মেরই কোন না কোন ধর্মগুরু, কিংবা স্কুলের শিক্ষক অথবা গুরুজনদের সেই নিয়ে প্রশ্ন করি। উত্তর আসলে যেমনই হোক, সন্তোষজনক অথবা অযৌক্তিক, আমাদের মেনে নিতে হয়। তারা আমাদের নানাভাবে মিথ্যা বলে, নানা গোঁজামিল দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করেন, ধর্মে যা আছে সেটিই সঠিক। যেমন ধরুন, আমরা যদি হিন্দু ধর্মে জন্মগ্রহণ করি, এবং মূর্তি পুজা করি, মন্দিরে যাই, মাঝেমাঝে ভিন্ন ধর্মের লোক এসে আমাদের মূর্তিগুলো ভেঙ্গে দিয়ে যায়। তখন আমাদের প্রশ্ন জাগে, এইসব মূর্তি, যা আমরা পুজা করি, সেগুলোর আসলেই কি কোন ক্ষমতা আছে? ক্ষমতা থাকলে বিধর্মীরা আমাদের মুর্তি এবং মন্দির ভেঙ্গে দিয়ে গেল কীভাবে? তখন আমাদের ধর্মগুরুরা নানা গোঁজামিল দিয়ে আমাদের বুঝ দেয়। অযৌক্তিক হলেও সেই কথাগুলোই আমাদের মেনে নিতে হয়।

আবার আমরা যদি মুসলিম বা খ্রীষ্টান ধর্মের পরিবারে জন্ম নিই, মাঝে মাঝে বিধর্মীরা আমাদের মসজিদ ভেঙ্গে দিয়ে যায়, কোরআন পুড়িয়ে দিয়ে যায়। এমনকি, কাবা শরীফেও অনেকবার আক্রমণ হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্ঘটনায় কাবা শরীফ ধ্বংসের ঘটনাও ঘটেছে। তখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, আসলেই কী আল্লাহর কোন ক্ষমতা আছে? ক্ষমতা থাকলে এগুলো হয় কীভাবে? আমরা সেইসব প্রশ্ন নিয়ে ধর্মগুরুদের কাছে গেলে, তারাও ঠিক একইভাবে ভুংভাং দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দেন। কথাগুলো যত অযৌক্তিকই হোক না কেন, যেহেতু ধর্মগুরুরা এগুলো বলেছে, আমাদের মেনে নেয়া ছাড়া আসলে আর কোন পথ থাকে না।

এর মানে হচ্ছে, আমরা আসলে যেই পরিবারে জন্ম নিই, বেশিরভাগ সময়ই ঘুরে ফিরে আমাদের সেই ধর্মের অনুশাসনই মানতে হয়, অথবা আমরা মানতে বাধ্য হয়। মাঝে মাঝে কিছু মানুষ ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করে, বা নাস্তিক হয়ে যায়। এটি ইসলামের ক্ষেত্রেও যেমন সত্য, অন্য ধর্মের বেলাতেও সত্য।

সাধারণভাবে আমরা বুঝি, মানুষ কোন পরিবারে জন্মেছে, কোন শিক্ষা পেয়েছে, কোন পরিবেশে বড় হয়েছে, এগুলোর ওপর ভিত্তি করে কাউকে বিবেচনা করা বিষয়টি ছোটলোকের কাজ। কিন্তু আল্লাহ এবং তার নবী কী এই দোষে দুষ্ট ছিল? আসুন হাদিস কী বলে দেখি [1] [2]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১ঃ ঈমান (বিশ্বাস)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ – তাকদীরের প্রতি ঈমান
১১১-(৩৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! মু’মিনদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের (জান্নাত-জাহান্নাম সংক্রান্ত ব্যাপারে) কী হুকুম? তিনি উত্তরে বললেন, তারা বাপ-দাদার অনুসারী হবে। আমি বললাম, কোন (নেক) ‘আমল ছাড়াই? তিনি বললেন, আল্লাহ অনেক ভালো জানেন, তারা জীবিত থাকলে কী ‘আমল করতো। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা মুশরিকদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের কী হুকুম? তিনি বললেন, তারাও তাদের বাপ-দাদার অনুসারী হবে। (অবাক দৃষ্টিতে) আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন (বদ) ‘আমল ছাড়াই? উত্তরে তিনি বললেন, সে বাচ্চাগুলো বেঁচে থাকলে কী ‘আমল করত, আল্লাহ খুব ভালো জানেন। (আবূ দাঊদ)(1)
(1) সহীহ : আবূ দাঊদ ৪০৮৯। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন : হাদীসটি দু’টি সানাদে বর্ণিত যার একটি সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৮. মুশরিকদের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে।
৪৬৪২. ইব্‌রাহীম ইবন মূসা (রহঃ) ….. আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জীবন্ত প্রথিত কন্যা এবং তার মা- উভয়ই জাহান্নামী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ শা‘বী (রহঃ)

এবারে আসুন কোরআনের একটি আয়াত পড়ি, যেখানে বলা হচ্ছে, আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না। তাহলে কাকে তিনি হেদায়াত দেন? যারা ইতিমধ্যে ভাল হয়েই আছে, তাদের? তাদের আর আল্লাহর হেদায়াতের প্রয়োজন কী? বাঙলায় একটি কথা প্রচলিত আছে, তৈলাক্ত মাথায় তেল ঢালা। যাদের হেদায়াতের দরকার, তাদের সেটি না দিয়ে যাদের দরকার নেই, তাদের বাড়তি হেদায়াত কেন দেয়া হবে? সেইসাথে, পুরো সম্প্রদায় ধরে এই ধরণের বক্তব্যের কারণ কী? সেই সম্প্রদায়ের নারী, শিশু, বৃদ্ধ মানুষ, প্রতিবন্ধী মানুষেরাও তো সেই সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা কী অপরাধে অপরাধী? [3]

হে মুমিনগণ, ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়াত দেন না।
— Rawai Al-bayan
হে মুমিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে নিশ্চয় তাদেরই একজন [১]। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

কোরআনের ঘোষনা

কোরআনে পরিষ্কারভাবেই বলা আছে, কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, অন্বেষণ করে, তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে [4] –

আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দ্বীন কবূল করা হবে না এবং আখেরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
Taisirul Quran
আর যে কেহ ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম অন্বেষণ করে তা কখনই তার নিকট হতে গৃহীত হবেনা এবং পরলোকে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
Sheikh Mujibur Rahman
আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
Rawai Al-bayan
আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
কোরআন সূরা ইমরান, আয়াত ৮৫ )

যৌক্তিক সংশয় বা খটকা হচ্ছে পাপ

সহিহ হাদিসে খুব পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে, মনে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া, খটকা লাগা, খটকার কারণে যাচাই করে দেখা, এগুলো সবই ইসলামের দৃষ্টিতে পাপ [5] –

হাদীস সম্ভার
৩০/ পাপ ও তাওবা
পরিচ্ছেদঃ পাপ-পুণ্য
(৩৭৯৭)ওয়াবেস্বাহ ইবনে মা’বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি পুণ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে এসেছ? আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, তুমি তোমার অন্তরকে (ফতোয়া) জিজ্ঞাসা কর। পুণ্য হল তা, যার প্রতি তোমার মন প্রশান্ত হয় এবং অন্তর পরিতৃপ্ত হয়। আর পাপ হল তা, যা মনে খটকা সৃষ্টি করে এবং অন্তর সন্দিহান হয়; যদিও লোকেরা তোমাকে (তার বৈধ হওয়ার) ফতোয়া দিয়ে থাকে।
(আহমাদ ১৮০০১, ১৮০০৬, দারেমী ২৫৩৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ওয়াবিসা বিন মা’বাদ জুহানী (রাঃ)

একইসাথে, হাদিসে এটিও উল্লেখ আছে যে, কোরআন নিয়ে বিতর্ক এবং সন্দেহ পোষণ করা কুফরী [6] –

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ৫. কুরআন নিয়ে বিতর্ক করা নিষেধ
৪৬০৩। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কুরআন সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করা কুফরী।[1]
হাসান সহীহ।
[1]. আহমাদ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

নাকে দড়ি বাধা উট

সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, মুমিন ব্যাক্তিকে হতে হবে নাসারন্ধ্রে লাগাম পরানো উটতুল্য। লাগাম ধরে যে দিকেই তাকে টানা হয়, সে দিকেই যেতে বাধ্য হয়। এর মানে হচ্ছে, ইসলামের বিধান সমূহ অন্ধভাবে বিশ্বাস করা এবং মেনে নেয়া। কোন ধরণের যাচাই বাছাই করে দেখা, যুক্তি প্রমাণ দিয়ে চিন্তা করে তারপরে মেনে নেয়া কিংবা না মানার সিদ্ধান্ত নেয়া, এগুলো কিছুই ইসলাম সমর্থন করে না। যুক্তি তথ্য প্রমাণ দিয়ে যাচাই করে দেখার কোন সুযোগই ইসলাম রাখে নি [7] –

সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ভূমিকা পর্ব
পরিচ্ছেদঃ ৬. হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ি রাশিদীনের সুন্নাতের অনুসরণ।
২/৪৩। ইরবায ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন হৃদয়গ্রাহী নাসীহাত করেন যে, তাতে (আমাদের) চোখগুলো অশ্রু ঝরালো এবং অন্তরসমূহ প্রকম্পিত হল। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এতো যেন নিশ্চয়ই বিদায়ী ভাষণ। অতএব আপনি আমাদের থেকে কি প্রতিশ্রুতি নিবেন (আদেশ দিবেন)? তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের আলোকিত দ্বীনের উপর রেখে যাচ্ছি, তার রাত তার দিনের মতই (উজ্জ্বল)। আমার পরে নিজেকে ধ্বংসকারীই কেবল এ দ্বীন ছেড়ে বিপথগামী হবে।
তোমাদের মধ্যে যে বেঁচে থাকবে সে অচিরেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। অতএব তোমাদের উপর তোমাদের নিকট পরিচিত আমার আদর্শ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের আদর্শ অনুসরণ করা অবশ্য কর্তব্য। তোমরা তা শক্তভাবে দাঁত দিয়ে আকড়ে ধরে থাকবে। তোমরা অবশ্যই আনুগত্য করবে, যদি হাবশী গোলামও (তোমাদের নেতা নিযুক্ত) হয়। কেননা মুমিন ব্যাক্তি হচ্ছে নাসারন্ধ্রে লাগাম পরানো উটতুল্য। লাগাম ধরে যে দিকেই তাকে টানা হয়, সে দিকেই যেতে বাধ্য হয়।
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ।
তাখরীজ আলবানী: সহীহাহ ৯৩৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ)

ইমান কাকে বলে

ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ স্বীকার করা, স্বীকৃতি দেওয়া, মতান্তরে দৃঢ় বিশ্বাস করা। ইসলাম ধর্মে ঈমানের অর্থ হচ্ছে, কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়াই নিচের সমস্ত কিছু নিঃসন্দেহে মেনে নেয়া এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা।

  • একক স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা।
  • আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস করা।
  • আসমানী কিতাব সমূহতে বিশ্বাস।
  • নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।
  • তাক্বদীর বা ভালো মন্দের ওপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করা।
  • আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস।
  • মৃত্যুর পর পুনঃজীবিত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস।

হাদিসেও এই বিষয়ে খুব পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, সংশয় সন্দেহ যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে ইসলামের বিধানগুলোকে যাচাই করতে না চাওয়াই ঈমান [8] –

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ – সন্দেহ-সংশয়, কুমন্ত্রণা
৬৪-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কতক সাহাবা (সাহাবা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্যে কেউ তার মনে কোন কোন সময় এমন কিছু কথা (সংশয়) অনুভব করে যা মুখে ব্যক্ত করাও আমাদের মধ্যে কেউ তা গুরুতর অপরাধ মনে করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি তা এমন গুরুতর বলে মনে কর? সাহাবীগণ বললেন, হাঁ! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটাই হলো স্বচ্ছ ঈমান। (মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : মুসলিম ১৩২, আবূ দাঊদ ৫১১১, আহমাদ ৯৬৯৫। এ হাদীসটি ইমাম হাকিম (রহঃ)-এর পা-ুলিপি হতে বিলুপ্ত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

বাঙলাভাষায় অন্ধবিশ্বাস এর অর্থ হচ্ছে, যুক্তিবুদ্ধি ব্যবহার না করে বা বিচার বিবেচনা না ক’রে কোনো কিছু মেনে নেয়া। মজার বিষয় হচ্ছে, ইসলামে ঈমানের সংজ্ঞাও ঠিক একই। তাফসীরে জালালাইনে ইমানের সংজ্ঞায় যা বলা হয়েছে, সেটি হচ্ছে, [9]

নবী করীম যা নিয়ে এসেছেন, তা তাঁর প্রতি আস্থা রেখে বিশ্বাস করা।
অনুভূতিগ্রাহ্য ও দৃশ্যমান কোনো বস্তুতে কারো কথায় বিশ্বাস করার নাম ঈমান নয়ঃ মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে আয়াতে দুটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ঈমান ও গায়েব। এ থেকে বোঝা গেল, অনুভূতিগ্রাহ্য ও দৃশ্যমান কোনো বস্তুতে কারো কথায় বিশ্বাস করার নাম ঈমান নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা হয় যে, কোনো ব্যক্তি যদি এক টুকরো সাদা কাপড়কে সাদা এবং এক টুকরো কালো কাপড়কে কালো বলে এবং এক ব্যক্তি তার কথা সত্য বলে মেনে নেয়, তাহলে একে ঈমান বলা যায় না। এতে বক্তার কোনো প্রভাব বা দখল নেই। অপরদিকে রাসূল এর কোনো সংবাদ কেবলমাত্র রাসূল এর উপর বিশ্বাসবশত মেনে নেওয়াকেই শরিয়তের পরিভাষায় ঈমান বলে।

যাচাই 2

তাফসীরে জালালাইনে আরো বলা আছে, ঈমান অর্থই গায়েবের ওপর বিশ্বাস। গায়েব সম্পর্কে বলা হয়েছে, যা সম্পর্কে যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে কোন কিছুই জানা সম্ভব নয় [10] –

যাচাই 4

দ্বিতীয় কলেমার সাক্ষ্য

একজন মুসলিম হতে হলে যেই পাঁচটি কলেমা জানতে এবং পড়তে হয়, তার মধ্যে একটি হচ্ছে, আল্লাহর কোন প্রমাণ ছাড়াই সে যে আছে তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান। সাক্ষ্য শব্দটি সাক্ষী হওয়ার সাথে জড়িত। কিন্তু নিজের চোখে না দেখেই, পর্যবেক্ষণ না করেই, কোন প্রমাণ না পেয়েই ইসলামে এই মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে হয়। যা শুরুতেই মুসলিমদের একটী মিথ্যা কথা শেখায়।

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই। তিনি এক, অদ্বিতীয় এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তার বান্দা ও প্রেরিত রাসুল।

যুক্তিতর্ক অপছন্দ করতেন নবী

ইসলাম ধর্মের অনেক কিছু নিয়ে যৌক্তিক আলাপ আলোচনা তর্ক বিতর্ক করতে নবী নিষেধ করে গেছে। উনি প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হতেন, যখন কেউ এই নিয়ে আলোচনা করতো। উনি চাইতেন, অন্ধভাবেই এগুলো তার উম্মতগণ বিশ্বাস করুক। ভয় দেখাবার জন্য বলেছেন, এই নিয়ে আলোচনা করলে ধ্বংস হয়ে যাবে [11] –

সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৫/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ তাকদীর নিয়ে আলোচনায় মত্ত হওয়া সম্পর্কে কঠোর সতর্কবাণী।
২১৩৬. আবদুল্লাহ ইবন মুআবিয়া জুমাহী (রহঃ) ……. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বের হয়ে এলেন। আমরা তখন তাকদীর বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করছিলাম। তিনি অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন। এমনকি তাঁর চেহারা লাল হয়ে উঠল, তাঁর দুই কপালে যেন ডালিম নিংড়ে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি বললেনঃ এই বিষয়েই কি তোমরা নির্দেশিত হয়েছ? আর এই নিয়েই কি আমি তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি? তোমাদের পূর্ববর্তীরা যখন এ বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে তখনই তারা ধ্বংস হয়েছে। দৃঢ়ভাবে তোমাদের বলছি, তোমরা যেন এ বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত না হও। হাসান, মিশকাত ৯৮, ৯৯, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২১৩৩ (আল মাদানী প্রকাশনী)
এ বিষয়ে উমার, আয়িশা ও আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি গারীব। সালিহ মুররী-এর রিওয়ায়াত হিসাবে এ সূত্র ছাড়া এটি সম্পর্কে আমরা অবহিত নই, সালিহ মুররি বেশ কিছু গারীব রিওয়ায়াত রয়েছে। যেগুলির বিষয়ে তিনি একা।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

একইসাথে, তিনি মুসলিমদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন, মাথায় ঈশ্বর বা আল্লাহ সম্পর্কে নানা ধরণের প্রশ্ন আসলে উত্তর না খুঁজে সেই সব প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করা থেকে বিরত থাকা উচিত [12] [13] –

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১৯৯৩. ইবলীস ও তার বাহীনীর বর্ণনা। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, يُقْذَفُونَ তাদের নিক্ষেপ করা হবে। دُحُورًا তাদের হাকিয়ে বের করে দেয়া হবে। وَاصِبٌ স্থায়ী। আর ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, مَدْحُورًا হাকিয়ে বের করা অবস্থায়। مَرِيدًا বিদ্রোহীরূপে। بَتَّكَهُ তাকে ছিন্ন করেছে। وَاسْتَفْزِزْ তুমি ভয় দেখাও। بِخَيْلِكَ অশ্বারোহী। وَالرَّجْلُ পাদাতিকগন। এর একবচন رَاجِلٌ যেমন صَاحِبٍ এর বহুবচন صَحْبٍ আর تَاجِرٍ এর বহুবচন تَجْرٍ، – لأَحْتَنِكَنَّ অবশ্যই আমি সমূলে উৎপাটন করব। قَرِينٌ শয়তান।
৩০৪৬। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো কাছে শয়তান আসতে পারে এবং সে বলতে পারে, এ বস্তু কে সৃষ্টি করেছেন? ঐ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমার প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন বিষয়টি এ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর কাছে পানাহ চায় এবং বিরত হয়ে যায়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৫৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ৫৯/১১. ইবলীস ও তার বাহিনীর বর্ণনা।
৩২৭৬. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো নিকট শয়তান আসতে পারে এবং সে বলতে পারে, এ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? ঐ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমার প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন ব্যাপারটি এ স্তরে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায় এবং বিরত হয়ে যায়। (মুসলিম ১/৬০ হাঃ ১৩৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৪৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

দর্শন শাস্ত্র বা যুক্তিবিদ্যা পড়া

দর্শন শাস্ত্র, বা ইংরেজিতে ফিলোসফি শব্দটির অর্থ হচ্ছে, “জ্ঞানের প্রতি ভালবাসা”। আরো ভালভাবে বললে, মানুষের অস্তিত্ব, জ্ঞান, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, কারণ, মন এবং ভাষা সম্পর্কে সাধারণ এবং মৌলিক প্রশ্নগুলির অধ্যয়ন। মানব ইতিহাসে প্রায় সকল জ্ঞানই দর্শন থেকে উদ্ভুত। যেকোন বিষয়ে উচ্চতর পড়ালেখা করলে PhD ডিগ্রী দেয়া হয়, যার অর্থ ডক্টর অফ ফিলোসফি। এর অর্থ, যেকোন বিষয়ে উচ্চতর পড়ালেখাই আসলে দর্শনের পড়ালেখা। বস্তুতপক্ষে, দর্শনই মানুষের সকল জ্ঞানের জননী। কিন্তু এই দর্শন বা যুক্তিশাস্ত্র অধ্যয়ন সম্পর্কে ইসলামের অবস্থান কী? প্রথমে আসুন বাঙলাদেশের বর্তমান সময়ের অন্যতম আলেম ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া সাহেবের একটি আলোচনা শুনি, যেখানে উনি মুসলমানদের যুক্তিবিদ্যা বা দর্শন পড়া উচিত নাকি অনুচিত সেই বিষয়ে আলোচনা করছেন,

শারহুল আক্বীদা আত-ত্বহাবীয়া অত্যন্ত বিখ্যাত একটি আকীদা গ্রন্থ, যার লেখক  ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী। তিনি তার বইতে এই বিষয়ে ইসলামের আকীদা কী, সালাফগণ এই বিষয়ে কী বলেছেন, সেটিও দেখে নিই [14] –

যাচাই 6

আল ফিকহুল আকবর একটি আদি ইসলামি আকিদা বিষয়ক গ্রন্থ। ইমাম আবু হানিফার লিখিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অক্ষত রয়ে যাওয়া এটি অন্যতম একটি গ্রন্থ। আসুন, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবের অনুদিত এই বইটি থেকে দর্শন বিষয়ক অধ্যায়টি পড়ি [15] –

আকীদা-শাস্ত্রের আরেকটি প্রসিদ্ধ নাম ‘ইলমুল কালাম’। ইলমুল কালাম বলতে মূলত ধর্মবিশ্বাসের বিষয়ে দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা ভিত্তিক আলোচনা বুঝানো হয়। ‘আল-কালাম’ (الكلام) শব্দের অর্থ কথা, বাক্য, বক্তব্য, বিতর্ক (word, speech, conversation, debate) ইত্যাদি। কেউ কেউ মনে করেন যে কালামুল্লাহ বা আল্লাহর কালাম (كلام الله) থেকে ইলমুল কালাম পরিভাষাটির উদ্ভব। কারণ ইলমুল কালামে আল্লাহর কালাম বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে জোরালো মত হল, গ্রীক ‘লগস’ (logos) শব্দ থেকে ‘কালাম’ শব্দটি গৃহীত হয়েছে। লগস (logos) শব্দটির অর্থ বাক্য, যুক্তিবৃত্তি, বিচারবুদ্ধি, পরিকল্পনা (word, reason, plan) ইত্যাদি। লগস শব্দ থেকে লজিক (logic) শব্দটির উৎপত্তি, যার অর্থ তর্কশাস্ত্র বা যুক্তিবিদ্যা।
সম্ভবত মূল অর্থের দিকে লক্ষ্য রেখে হিজরী দ্বিতীয় শতকের আরব পন্ডিতগণ ‘লজিক’ শব্দের আরবী প্রতিশব্দ হিসেবে ‘ইলমুল কালাম’ (কথা-শাস্ত্র) পরিভাষা ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে এ অর্থে ‘ইলমুল মানতিক’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার আভিধানিক অর্থও ‘কথা-শাস্ত্র’। সর্বাবস্থায় ইলমুল কালাম বলতে দর্শন বা যুক্তিবিদ্যা ভিত্তিক ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা বা গবেষণা (speculative theology, scholastic theology) বুঝানো হয়।
প্রাচীন যুগ থেকে দার্শনিকগণ মানবীয় যুক্তি, বুদ্ধি, জ্ঞান বা দর্শনের মাধ্যমে মানবীয় ইন্দ্রিয়ের অজ্ঞাত বিষয় সমূহ নিয়ে গবেষণা করেছেন। স্রষ্টা, সৃষ্টি, সৃষ্টির প্রকৃতি, স্রষ্টার প্রকৃতি, কর্ম, বিশেষণ ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তি তর্ক দিয়ে তাঁরা অনেক কথা বলেছেন। এ সকল বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তিতর্ক মানুষকে অত্যন্ত আকর্ষিত করলেও তা কোনো সত্যে পৌঁছাতে পারে না। কারণ মানুষ যুক্তি বা জ্ঞান দিয়ে স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুভব করতে বা নিশ্চিত হতে পারে, কিন্তু স্রষ্টার প্রকৃতি, কর্ম, বিশেষণ, স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে চূড়ান্ত সত্যে পৌঁছাতে পারে না। এজন্য কখনোই দার্শনিকগণ এ সকল বিষয়ে একমত হতে পারেন নি। তাদের গবেষণা ও বিতর্ক অন্ধের হাতি দেখার মতই হয়েছে।
দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে গ্রীক, ভারতীয় ও পারসিক দর্শন প্রচার লাভ করে। মূলধারার তাবিয়ীগণ ও তাঁদের অনুসারীগণ বিশ্বাস বা গাইবী বিষয়ে দার্শনিক বিতর্ক কঠিনভাবে অপছন্দ করতেন। কারণ তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, গাইবী বিষয়ে ওহীর উপর নির্ভর করা এবং ওহীর নির্দেশনাকে মেনে নেওয়াই মুমিনের মুক্তির পথ।
ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) ও তাঁর সহচরগণ ‘ইলমুল কালামৎ শিক্ষা করতে ঘোর আপত্তি করেছেন। ইলমুল কালামের প্রসার ঘটে মূলত দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রথমাংশে, বিশেষত ১৩২ হিজরী (৭৫০ খৃ) সালে আববাসী খিলাফতের প্রতিষ্ঠার পর। ইমাম আবূ হানীফা শিক্ষা জীবনে বা তাঁর জীবনের প্রথম ৩০ বৎসরে (৮০-১১০ হি) দর্শনভিত্তিক ইলমুল কালাম সমাজে তেমন পরিচয় লাভ করে নি। তবে দর্শনভিত্তিক বিভ্রান্ত মতবাদগুলো তখন কুফা, বসরা ইত্যাদি এলাকায় প্রচার হতে শুরু করেছে। গ্রীক-পারসিক দর্শন নির্ভর কাদারিয়া, জাবারিয়া, জাহমিয়া ইত্যাদি মতবাদ দ্বিতীয় হিজরী শতকের শুরু থেকেই জন্ম লাভ করে। এ সকল মতবাদ খন্ডন করতে মূলধারার কোনো কোনো আলিম দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা নির্ভর যুক্তি-তর্কের আশ্রয় নিতে থাকেন।
কোনো কোনো জীবনীকার উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) প্রথম জীবনে এরূপ দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা নির্ভর বিতর্ক বা ইলমুল কালামের চর্চা করেন। পরবর্তীতে তিনি তা বর্জন করেন এবং তা বর্জন করতে নির্দেশ প্রদান করেন। ইলমুল কালামের প্রাথমিক অবস্থাতেই তিনি এর ক্ষতি ও ভয়াবহতা অনুধাবন করতে সক্ষম হন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন:
كنت أعطيت جدلا فى الكلام … فلما مضى مدة عمري تفكرت وقلت السلف كانوا أعلم بالحقائق ولم ينتصبوا مجادلين بل أمسكوا عنه وخاضوا فى علم الشرائع ورغبوا فيه وتعلموا وعلموا وتناظروا عليه فتركت الكلام واشتغلت بالفقه ورأيت المشتغلين بالكلام ليس سيماهم سيماء الصالحين قاسية قلوبهم غليظة أفئدتهم لا يبالون بمخالفة الكتاب والسنة ولو كان خيرا لاشتغل به السلف الصالحون
‘‘কালাম বা দর্শনভিত্তিক বিতর্কে আমার পারদর্শিতা ছিল … আমার জীবনের কিছু সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর আমি চিন্তা করলাম যে, পূর্ববর্তীগণ (সাহাবীগণ ও প্রথম যুগের তাবিয়ীগণ) দীন-ঈমানের প্রকৃত সত্য বিষয়ে অধিক অবগত ছিলেন। তাঁরা এ সকল বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হন নি। বরং ঈমান-আকীদা বিষয়ক বিতর্ক তাঁরা পরিহার করতেন। তাঁরা শরীয়ত বা আহকাম বিষয়ে আলোচনা ও অধ্যয়নে লিপ্ত হতেন, এগুলোতে উৎসাহ দিতেন, শিক্ষা করতেন, শিক্ষা দিতেন এবং এ বিষয়ে বিতর্ক- আলোচনা করতেন। এজন্য আমি কালাম পরিত্যাগ করে ফিকহ চর্চায় মনোনিবেশ করি। আমি দেখলাম যে, কালাম বা দর্শনভিত্তিক আকীদা চর্চায় লিপ্ত মানুষগুলোর প্রকৃতি ও প্রকাশ নেককার মানুষদের মত নয়। তাদের হৃদয়গুলো কঠিন, মন ও প্রকৃতি কর্কশ এবং তারা কুরআন ও সুন্নাতের বিরোধিতা করার বিষয়ে বেপরোয়া। কালাম চর্চা যদি কল্যাণকর হতো তাহলে অবশ্যই পূর্ববর্তীগণ (সাহাবী-তাবিয়ীগণ) এর চর্চার করতেন।’’[1]
ইমাম যাহাবী উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম আবূ হানীফার শিক্ষা জীবনে ‘ইলমুল কালাম’-এর অস্তিত্বই ছিল না।[2] অর্থাৎ এ সময়ে দর্শন ভিত্তিক আকীদা চর্চা কোনো পৃথক ‘ইলম’ বা জ্ঞানে পরিণত হয় নি। কারণ ইমাম আবূ হানীফা ১০০ হিজরীর আগেই ফিকহ শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। ইমাম যাহাবী বলেন:
فأفقه أهل الكوفة علي وابن مسعود، وأفقه أصحابهما علقمة، وأفقه أصحابه إبراهيم، وأفقه أصحاب إبراهيم حماد، وأفقه أصحاب حماد أبو حنيفة،
‘‘কূফার সর্বশ্রেষ্ঠ ফকীহ আলী (রা) এবং ইবন মাসঊদ (রা)। তাঁদের ছাত্রদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফকীহ আলকামা। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফকীহ ইবরাহীম নাখয়ী (৯৬ হি)। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফকীহ হাম্মাদ ইবন আবী সুলাইমান (১২০ হি)। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফকীহ আবূ হানীফা।’’[3]
উল্লেখ্য যে, ১২০ হিজরীতে ইমাম হাম্মাদের ওফাতের পর ইমাম আবূ হানীফা তাঁর স্থলাভিষিক্ত বলে গণ্য হন। এতে প্রমাণ হয় যে, এ সময়ের অনেক পূর্বেই ইমাম আবূ হানীফা কুফার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকীহ বলে গণ্য হয়েছেন। এতে সুস্পষ্ট যে, ১০০ হিজরীর পূর্ব থেকেই তিনি ফিকহ শিক্ষা ও চর্চায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। আর ১০০ হিজরীর পূর্বে মুসলিম বিশ্বে দর্শনভিত্তিক আকীদা চর্চা কোনো ‘ইলম’ বা শাস্ত্র হিসেবে প্রকাশ ও প্রসার লাভ করে নি। তাঁর পরিণত বয়সে (১১০-১৫০ হি) সমাজে ইলমুল কালাম চর্চা প্রসার লাভ করে এবং তিনি ইলমুল কালামের চর্চা থেকে তাঁর অনুসারীদেরকে নিষেধ করেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর পুত্র হাম্মাদ বলেন:
أخذ أبو حنيفة رضي الله عنه بيدي يوم الجمعة، فأدخلني المسجد، …. مَرَّ بقوم يتنازعون في الدين، فقال: يا بنيَّ! إذا مهر في هذا الأمر، قيل: زنديق ، وأُخرِج من حَدِّ الإسلام، فيصير بحال لا ينتفع به. …. قال حماد بن أبي حنيفة: وكنتُ معجَبا بالمنازعة، فتركتُ المنازعةَ بعد قول الشيخ
এক শুক্রবারে আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) আমার হাত ধরে মসজিদে প্রবেশ করেন। …. তিনি দীন (আকীদা) বিষয়ে বিতর্কে (কালাম চর্চায়) লিপ্ত একদল মানুষদের নিকট দিয়ে গমন করেন এবং আমাকে বলেন: বেটা, যে ব্যক্তি এ শাস্ত্রে পারদর্শিতা অর্জন করবে সে যিনদ্দীক (ধর্মত্যাগী ও ধর্ম অবমাননাকারী) বলে আখ্যায়িত হবে এবং ইসলামের পরিমন্ডল থেকে বহির্ভূত বলে গণ্য হবে। এভাবে সে এমন অবস্থায় পৌঁছাবে যে, তার দ্বারা কোনো কল্যাণ সাধিত হবে না। …. হাম্মাদ ইবন আবী হানীফা বলেন: আমি এরূপ বিতর্কের বিষয়ে খুবই আগ্রহী ছিলাম। শাইখ (রা)-এর এ কথার পরে আমি এ জাতীয় বিতর্ক পরিত্যাগ করি।’’[4]
ইমাম আবূ হানীফার ছাত্র নূহ ইবন আবী মরিয়ম বলেন:
قلت لأبي حنيفة رحمه الله ما تقول فيما أحدث الناس من كلام في الأعراض والأجسام فقال مقالات الفلاسفة عليك بالأثر وطريقة السلف وإياك وكل محدثة فإنها بدعة.
‘‘আমি আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহকে বললাম: মানুষেরা ইলমুল কালামে (স্রষ্টার অস্তিত্ব, অনাদিত্ব ও বিশেষণ প্রমাণে) ‘আরায’ (অমৌল-পরনির্ভর: nonessential), ‘জিসম’ (দেহ: body) ইত্যাদি বিষয়ক আলোচনা উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর বিষয়ে আপনার মত কী? তিনি বলেন: এগুলো দার্শনিকদের কথাবার্তা। তোমার দায়িত্ব হাদীসের উপর নির্ভর করা এবং পূর্ববতীদের (সাহাবী-তাবিয়ীদের) তরীকা অনুসরণ করা। সাবধান! সকল নব-উদ্ভাবিত বিষয় বর্জন করবে; কারণ তা বিদআত।’’[5]
ইমাম আযমের ছাত্রগণও এভাবে ইলমুল কালাম চর্চা নিষেধ করতে থাকেন। ইমাম আবূ ইউসূফ রাহ. (১৮৯ হি) তাঁর ছাত্র ইলমুল কালামের বিশেষজ্ঞ ও মু’তাযিলী পণ্ডিত বিশ্র আল-মারীসী (২১৮ হি)- কে বলেন:
اَلْعِلْمُ بِالْكَلاَمِ هُوَ الْجَهْلُ وَالْجَهْلُ بِالْكَلاَمِ هُوَ الْعِلْمُ، وَإِذَا صَارَ الرَّجُلُ رَأْساً فِيْ الْكَلاَمِ قِيْلَ: زِنْدِيْقٌ.
‘‘কালামের জ্ঞানই হলো প্রকৃত অজ্ঞতা আর কালাম সম্পর্কে অজ্ঞতাই হলো প্রকৃত জ্ঞান। ইলমুল কালামে সুখ্যাতির অর্থ তাকে যীনদীক বা অবিশ্বাসী-ধর্মত্যাগী বলা হবে।’’[6]
ইমাম আবূ ইউসুফ (রাহ) আরো বলেন:
مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ بِالْكَلاَمِ تَزَنْدَقَ
‘‘যে ব্যক্তি ইলমু কালাম শিক্ষা করবে সে যিনদীকে পরিণত হবে।’’[7]
ইমাম শাফিয়ী রাহ. (২০৪ হি) বলেন,
حُكْمِيْ فِيْ أَهْلِ الْكَلاَمِ أَنْ يُضْرَبُوا بِالْجَرِيْدِ وَالنِّعَالِ وَيُطَافُ بِهِمْ فِيْ الْعَشَائِرِ وَالْقَبَائِلِ وَيُقَالُ: هَذَا جَزَاءُ مَنْ تَرَكَ الْكِتَابَ وَالسُّنَّةَ وَأَقْبَلَ عَلَى الْكَلاَمِ.
‘‘যারা ইলমুল কালাম চর্চা করে তার বিষয়ে আমার বিধান এই যে, তাদেরকে খেজুরের ডাল ও জুতা দিয়ে পেটাতে হবে, এভাবে মহল্লায় মহল্লায় ও কবীলাসমূহের মধ্যে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে এবং বলতে হবে: যারা কিতাব ও সুন্নাত ছেড়ে ইলমুল কালামে মনোনিবেশ করে তাদের এ শাস্তি।’’[8]
এভাবে প্রসিদ্ধ চার মুজতাহিদ ইমাম এবং দ্বিতীয়-তৃতীয় হিজরী শতকের সকল প্রসিদ্ধ আলিম, ইমাম, ফকীহ ও মুহাদ্দিস অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ইলমুল কালামের নিন্দা করেছেন।[9]
পরবর্তী যুগে ইমাম আবূ হানীফা ও অন্যান্য ইমামের অনুসারী অনেক আলিম আহলুস সুন্নাতের আকীদা ব্যাখ্যার জন্য ইলমুল কালাম চর্চা করেছেন। বিভ্রান্ত ফিরকাসমূহের বিভ্রান্তির উত্তর প্রদানের প্রয়োজনেই তাঁরা ইলমুল কালামের পরিভাষা ও পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন বলে তাঁরা উল্লেখ করেছেন। তবে তাঁরা ইলমুল কালামের দার্শনিক ছায়া থেকে বের হতে পারেন নি। তাদের আলোচনায় সর্বদা কুরআন, হাদীস বা ওহীর বক্তব্যর চেয়ে যুক্তি, তর্ক ও দর্শন প্রাধান্য পেয়েছে।[10]
ইলমুল কালামের বিরুদ্ধে ইমাম আযম ও অন্যান্য ইমামের বক্তব্যকে তাঁরা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন যে, ইমামগণ মূলত ইলমুল কালাম ভিত্তিক মুতাযিলী ও অন্যান্য মতবাদের নিন্দা করেছেন, ইলমুল কালম ভিত্তিক আকীদা চর্চার নিন্দা তাঁরা করেন নি। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি যে, চার ইমাম ও দ্বিতীয়-তৃতীয় শতকের অন্যান্য ইমাম মূলত ইলমুল কালাম ভিত্তিক আকীদা চর্চার নিন্দা করেছেন। তাঁরা সকলেই আকীদা বিষয় আলোচনা করেছেন এবং অনেকে গ্রন্থ রচনা করেছেন। তবে তাঁরা কুরআন, হাদীস ও সাহাবীগণের বক্তব্যের উপর নির্ভর করে আকীদা ব্যাখ্যা করেছেন। এর বিপরীতে দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা নির্ভর আকীদা চর্চা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। সঠিক আকীদা প্রমাণের জন্যও দর্শন নির্ভর বিতর্ক তাঁরা নিষেধ করেছেন। কারণ সালফ সালিহীনের আকীদা চর্চা ও ইলমুল কালামের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য ওহী ও আকল-এর অবস্থান।
ইমামগণ বা সালফ সালিহীনের আকীদা চর্চা ওহী নির্ভর, বিশেষত হাদীস ও ‘আসার’ বা সাহাবীগণের বক্তব্য নির্ভর। পক্ষান্তরে ইলমুল কালাম ‘আকল’ অর্থাৎ জ্ঞানেন্দ্রিয়, বোধশক্তি বা বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি ও দর্শন নির্ভর। ইমামগণের বক্তব্য সর্বদা নিম্নরূপ: তোমার বিশ্বাস এরূপ হতে হবে; কারণ কুরআনে, হাদীসে বা সাহাবীগণের বক্তব্যে এরূপ বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে ইলমুল কালামের বক্তব্য নিম্নরূপ: তোমাকে এরূপ বিশ্বাস করতে হবে; কারণ জ্ঞান, বিবেক ও যুক্তি এটিই প্রমাণ করে। আমরা ওহী ও আকলের অবস্থান সম্পর্কে ইমামগণের মত আকীদার উৎস বিষয়ক অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ। এখানে সংক্ষেপে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষণীয়:
(ক) আমরা দেখেছি যে, ইমাম আবূ হানীফার ছাত্র নূহ ইবন আবী মরিয়ম যখন তাকে ইলমুল কালামের আরায (অমৌল), জিসম (দেহ) ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশ্ন করেন তখন তিনি বলেন: ‘‘এগুলো দার্শনিকদের কথাবার্তা। তোমার দায়িত্ব হাদীসের উপর নির্ভর করা এবং পূর্ববতীদের (সাহাবী-তাবিয়ীদের) তরীকা অনুসরণ করা। সাবধান! সকল নব-উদ্ভাবিত বিষয় বর্জন করবে; কারণ তা বিদআত।’’
ইলমুল কালাম চর্চা করতে গেলে এ সকল পরিভাষার উপর নির্ভর করা ছাড়া কোনো উপাই নেই। মহান আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ব, বিশেষণ ইত্যাদি প্রমাণের জন্য আরায, জিসম, জাওহার ইত্যাদি পরিভাষাগুলোই কালামবিদগণের একমাত্র ভিত্তি। এ থেকে আমরা নিশ্চিত হই যে, ইমামগণ মূলত সাহাবী তাবিয়ীদের পদ্ধতিতে ওহী-নির্ভর আকীদা চর্চায় উৎসাহ দিয়েছেন এবং দার্শনিকদের পরিভাষা এবং দার্শনিক যুক্তিতর্ক নির্ভর ইলমুল কালাম ভিত্তিক আকীদা চর্চা নিষেধ করেছেন।
(খ) ইমামগণ ফিকহ ও কালাম উভয় ক্ষেত্রেই কুরআন, হাদীস ও আসার বা সাহাবী-তাবিয়ীগণের বক্তব্যের উপর সমানভাবে নির্ভর করেছেন। ফিকহের ন্যায় আকীদার ক্ষেত্রেও তাঁরা ‘খাবারুল ওয়াহিদ’ বা একক বর্ণনার সহীহ হাদীসগুলোর উপর নির্ভর করেছেন। আর এজন্যই ইমাম আযম আকীদাকেও ‘ফিকহ’ বলেছেন এবং আল-ফিকহুল আকবার বা আল-ফিকহু ফিদ্দীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। পক্ষান্তরে কালামবিদগণ ফিকহ ও আকীদার মধ্যে পার্থক্য করেছেন। তারা দাবি করেছেন যে, ফিকহ বা কর্মের ক্ষেত্রে হাদীস, খাবারুল ওয়াহিদ বা সাহাবী-তাবিয়ীগণের বক্তব্যের উপর নির্ভর করা যায়, কিন্তু বিশ্বাস বা আকীদার ক্ষেত্রে আকলের বিরুদ্ধে কারো বক্তব্য গ্রহণ করা যায় না বা কারো ‘তাকলীদ’ করা যায় না।
(গ) ইমামগণের দৃষ্টিতে ওহী বা কুরআন-হাদীসের বক্তব্য মানুষকে সত্যের নির্দেশনা প্রদানের জন্য। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সাধারণ-অসাধারণ সকল মানুষ যেন বিশ্বাস ও কর্মের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা-বহির্ভূত ও ইন্দ্রিয়-বহির্ভূত বিষয়গুলোতে সহজ দিক নির্দেশনা লাভ ও সত্য অনুসরণ করতে পারে সেজন্যই মহান আল্লাহ নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে ওহী ও কিতাব প্রদান করেন। এজন্য দীন ও শরীয়তে বা বিশ্বাস ও কর্মে সকল ক্ষেত্রে ওহীর বক্তব্যকে সর্বদা সরল ও প্রকাশ্য অর্থে গ্রহণ করতে হবে এবং এর রূপকার্থ ও দূরবর্তী ব্যাখ্যা বর্জন করতে হবে। ওহীকে রূপকার্থে ব্যবহার করা বা ওহীর দূরবর্তী ব্যাখ্যা করার অর্থ ওহীকে অকার্যকর করা। এজন্য তাঁরা যেভাবে সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি কর্ম বিষয়ক নির্দেশনার রূপক অর্থ গ্রহণ ও ব্যাখ্যা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন, তেমনি মহান আল্লাহর বিশেষণ, আখিরাত, কিয়ামতের আলামত, কবর, হাশর ও অন্যান্য বিশ্বাসীয় বিষয়েও ওহীর বক্তব্যের রূপক অর্থ গ্রহণ ও ব্যাখ্যা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এর বিপরীতে ইলমুল কালামের দৃষ্টিতে ওহীর নির্দেশনা অস্পষ্ট ও এতে রূপকের সম্ভাবনা ব্যাপক। এজন্য বিশ্বাসের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আকলের উপর নির্ভর করতে হবে। ওহীর কোনো বক্তব্য আকলের ব্যতিক্রম হলে তা রূপক অর্থে ব্যাখ্যা করতে হবে।
(ঘ) ইমামগণের দৃষ্টিতে বিশ্বাস ও কর্মে সকল ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীগণই পূর্ণতম আদর্শ। তাঁদের মত হওয়া বা হুবহু তাঁদের অনুসরণ করাই মুমিনের লক্ষ্য। অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় আকীদা চর্চারও উদ্দেশ্য আকীদা বিষয়ে সুন্নাতের প্রতিষ্ঠা ও পুনরুজ্জীবন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবীগণের আকীদার সাথে মুমিনের আকীদার হুবহু মিল প্রতিষ্ঠাই এখানে উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে ইলমুল কালামের উদ্দেশ্য আকল, বুদ্ধি ও বিবেক খাটিয়ে বিশ্বাস বিষয়ক সত্যে উপনীত হওয়া। কুরআন, সুন্নাহ বা সাহাবীগণের সাথে মিল ও অমিল এখানে গৌণ। মিল হলে ভাল কথা, নইলে কোনোরূপ ব্যাখ্যা করলেই হলো।
(ঙ) ইমামগণের আকীদা চর্চার ক্ষেত্রে মতভেদের সুযোগ খুবই সীমিত। কারণ সকলেই ওহীর উপর নির্ভর করেছেন এবং ওহীর ব্যাখ্যা বর্জন করেছেন। আর ওহীর মধ্যে ভিন্নতার অবকাশ খুবই কম। পক্ষান্তরে ইলমুল কালাম চর্চায় সকলেই জ্ঞান, যুক্তি ও বুদ্ধি-বিবেকের উপর নির্ভর করেছেন এবং ওহীকে নিজ নিজ বুদ্ধি-বিবেক অনুসারে ব্যাখ্যা করেছেন। জ্ঞানবুদ্ধি ও যুক্তির কোনো নির্ধারিত মানদন্ড নেই। কেউ দেবতার জন্য নরবলিকেও আকল-নির্দেশিত বা জ্ঞান ও যুক্তিসঙ্গত বলে প্রমাণের চেষ্টা করছেন। আবার কেউ জীবন ধারণের জন্য মাংস ভক্ষণকে অযৌক্তিক বা বিবেক বিরুদ্ধ বলে দাবি করছেন। এজন্য কালাম ভিত্তিক আকীদা চর্চায় মতভেদ খুবই বেশি।
[1] কুরাশী, তাবাকাতুল হানাফিয়্যাহ, পৃষ্ঠা, ৪৬৮।
[2] যাহাবী, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৬/৩৯৮।
[3] যাহাবী, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৩১-২৩৬।
[4] সায়িদ নাইসাপূরী হানাফী, আল-ই’তিকাদ, পৃষ্ঠা ১৭৭।
[5] হারাবী, আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ আনসারী, যাম্মুল কালাম ওয়া আহলিহী ৫/২০৬-২০৭।
[6] ইবন আবিল ইয্য হানাফী, শারহুল আকীদাহ আত-তাহাবিয়্যাহ, পৃ. ৭৫
[7] ইবন আবিল ইয্য, শারহুল আকীদাহ আত-তাহাবিয়্যাহ, পৃ. ৭৫
[8] ইবন আবিল ইয্য, শারহুল আকীদাহ আত-তাহাবিয়্যাহ, পৃ. ৭৫
[9] গাযালী, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন ১/৩৩, ৫২-৫৩; ইবন আবিল ইয্য, শারহুল আকীদা আত-তাহাবিয়্যাহ, পৃ. ৭২-৭৭, ২০৪-২১০।
[10] গাযালী, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন ১/৩৩, ৫২-৫৩; ইবন আবিল ইয্য, শারহুল আকীদা আত-তাহাবিয়্যাহ, পৃ. ৭২-৭৭, ২০৪-২১০।

যাচাই 8
যাচাই 10
যাচাই 12
যাচাই 14
যাচাই 16
যাচাই 18
যাচাই 20

পার্থিব জ্ঞান সম্পর্কে ইসলাম

বিজ্ঞান হচ্ছে মূলত পদ্ধতিগত ও বিধিবদ্ধ পার্থিব জ্ঞানের সমষ্টি, যার প্রধান উদ্দেশ্য সত্য জানা এবং পার্থিব সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করা, মানুষের পার্থিব স্বার্থ রক্ষা করা। যেমন ধরুন, একটি রোগ এবং তার ঔষধ নিয়ে বিজ্ঞানীগণ গবেষণা করেন পার্থিব জীবনে মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই। ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান। একইসাথে বিজ্ঞানের সমস্ত শাখা প্রশাখাই আসলে পার্থিব জীবনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট; মানুষের ক্ষুধা, রোগব্যাধি অথবা মানুষের পার্থিব জীবনকে সহজ করে তোলার জন্য। পার্থিব বিষয়াদিই বিজ্ঞানে মুখ্য, পারলৌকিক কোন বিষয় বা আল্লাহর সন্তুষ্টি বিজ্ঞানের কোন ধর্তব্যের বিষয়ই নয়। তাহলে আসুন দেখি, এই বিষয়ে ইসলামের অবস্থান কী [16] [17] –

সুনান ইবনু মাজাহ
ভূমিকা পর্ব
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. জ্ঞান দ্বারা উপকৃত হওয়া এবং তদনুযায়ী ‘আমল করা।
৩/২৫২। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে জ্ঞান দ্বারা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা হয়, যদি কেউ সেই জ্ঞান পার্থিব স্বার্থ সিদ্ধির জন্য শিক্ষা করে, তবে সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুবাসও পাবে না।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: আবূ দাঊদ ৩৬৬৪, আহমাদ ৮২৫২।
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবী ফুদায়লাহ বিন সুলায়মান সম্পর্কে ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনু আদী ও ইমাম দারাকুতনী বলেন, তার হাদিস বর্ণনায় সমস্যা নেই। আস-সাজী বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)
১২/ ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ২৪১: ইলমের ফযীলত
তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৩৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৯১
১৬/১৩৯৯। উক্ত রাবী (আবূ হুরাইরা) রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন জ্ঞান অর্জন করল, যার দ্বারা আল্লাহ আয্যা অজাল্লার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা সে কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করল, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সানাদ)[1]
[1] আবূ দাউদ ৩৬৬৪, ইবনু মাজাহ ২৫২, আহমাদ ৮২৫২
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

হাদীস সম্ভার
১৪/ ইলম
পরিচ্ছেদঃ ইলমের নামে অর্থোপার্জন
(১৫৮৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে বিদ্যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা যদি একমাত্র সামান্য পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে কেউ শিক্ষা করে, তাহলে সে কিয়ামতের দিনে জান্নাতের সুগন্ধটুকুও পাবে না।
(আবু দাঊদ ৩৬৬৬, আহমাদ ৮৪৫৭, ইবনে মাজাহ ২৫২, ইবনে হিব্বান ৭৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

ইসলামে বিবেক বিবেচনা ব্যবহার নিষেধ

ইসলামে ধর্ম বিষয়ে মানুষের অভিমত ও বিবেক বিবেচনাকে সরাসরিই নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সুনান আবু দাউদে হযরত আলীর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, ধর্মের মাপকাঠি কখনো মানুষের বিবেক বিবেচনা কিংবা অভিমতের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না। এটি হচ্ছে শুধুমাত্র নির্দেশনা পালন [18] –

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১/ পবিত্রতা অর্জন
পরিচ্ছেদঃ ৬৩. (মোজার উপর) মাসাহ্ করার নিয়ম
১৬৪। আ‘মাশ (রহঃ) পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাতে রয়েছে (‘আলী (রাঃ) বলেনঃ) ধর্মের মাপকাঠি যদি রায়ের (মানুষের মনগড়া অভিমত ও বিবেক-বিবেচনার) উপর নির্ভরশীল হত, তাহলে মোজার উপরিভাগের চেয়ে তলার দিক মাসাহ্ করাই অধিক যুক্তি সঙ্গত হত। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (পায়ের) মোজাদ্বয়ের উপরিভাগই মাসাহ্ করেছেন।[1]
সহীহ।
হাদীসটি ওয়াকী‘ (রহঃ) আ‘মাশ হতে তাঁর (উপরোক্ত) সানাদে বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে (‘আলী (রাঃ) বলেনঃ) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর মোজার উপরিভাগ মাসাহ্ করতে দেখার পূর্বে পায়ের তলার দিক মাসাহ করাকে অধিক যুক্তিসঙ্গত মনে করতাম। ওয়াকী’ বলেনঃ এখানে ‘উপরিভাগ’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে (পায়ের) মোজাদ্বয়ের উপর। হাদীসটি আ‘মাশ থেকে ঈসা ইবনু ইউনুসও ওয়াকী‘র অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবুস্ সাওদা হাদীসটি ইবনু ‘আবদি খাইর হতে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ আমি ‘আলী (রাঃ)-কে অযু করার সময় তাঁর দু’ পায়ের উপরিভাগ ধৌত করতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, যদি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপ করতে না দেখতাম’ …। অতঃপর হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।
সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আ‘মাশ (রহঃ)

আসুন আরেকটি হাদিস পড়ি [19] –

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৫/ কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারন
পরিচ্ছেদঃ ৩০৮১. মনগড়া মত ও ভিত্তিহীন কিয়াস নিন্দনীয়। আর আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না……. (১৭ঃ ৩৬)
৬৮১০। আবদান (রহঃ) … আমাশ (রহঃ) বলেন। আমি আবূ ওয়ায়েলকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি সিফফীনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। মূসা ইবনু ইসমাঈল সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) বলেন, হে লোকেরা! দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের মনগড়া মতামতকে নির্ভরযোগ্য মনে করো না। কেননা আবূ জানদাল দিবসে (হুদায়বিয়ার দিবসে) আমার এমন মনে হচ্ছিল যে, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করতে পারতাম তাহলে অবশ্যই আমি তা প্রত্যাখ্যান করতাম। যে কোন ভয়ষ্কর যুদ্ধের জন্য আমরা যখনই তরবারী কাঁধে ধারণ করেছি, তখনই তরবারী আমাদের কাঙ্ক্ষিত লড়ার দিকে পথ সুগম করে দিয়েছে। বর্তমান বিষয়টি স্বতস্ত্র। রাবী বলেন, আবূ ওয়ায়েল (রাঃ) বলেছেনঃ আমি সিফফীনের যুদ্ধে শরীক ছিলাম; বড়ই মন্দ ছিল সিফফীনের লড়াই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আ‘মাশ (রহঃ)

এবারে আসুন এর ব্যাখ্যাটিও পড়ি [20] –

যাচাই 22

এবারে আসুন আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকীদা গ্রন্থগুলোতে এই বিষয়ে কী লেখা রয়েছে তা পড়ে দেখা যাক। শারহুল আক্বীদা আত-ত্বহাবীয়া অত্যন্ত বিখ্যাত একটি আকীদা গ্রন্থ, যার লেখক  ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী। তিনি তার বইতে কোরআন হাদিস যা স্পষ্টভাবে বলা আছে সে সব সম্পর্কে সকল উম্মতকে সন্দেহ পোষণ করা, যাচাই করে দেখা, নিজের বিবেক বুদ্ধি সেসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার কথাই বলা আছে। কারণ দর্শন, যুক্তিবিদ্যা বা তর্কশাস্ত্র পাঠ করলে, সেই নিয়ে চিন্তাভাবনা করলেই ইসলামের ঈমান দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই সকল আলেম ওলামা একমত [21] –

যাচাই 24

অন্য ধর্মগ্রন্থ পড়া কী বৈধ?

অন্য একটি ধর্ম যে মিথ্যা, বা অন্য একটি ধর্ম যে বিকৃত, আমার ধর্মটিই যে একমাত্র সত্য, তা বোঝার জন্য জরুরি হচ্ছে, অন্য ধর্মগ্রন্থ নিজের পড়ে যাচাই করে দেখা। আমি যদি নিজে পড়েই না দেখি, তাহলে যাচাই করবো কীভাবে? ধরা যাক, একজন দোকানদার দাবী করেছে, মিল্কভিটা দুধ পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল এবং শ্রেষ্ঠ দুধ, বাদবাকি সব দুধ হচ্ছে ভেজালযুক্ত। প্রমাণ হিসেবে সে উপস্থাপন করেছে মিল্কভিটা কোম্পানির একটি বিজ্ঞাপন, যেখানে লেখা রয়েছে যে, মিল্কভিটা দুধই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং বাদবাকি সকল দুধ ভেজাল। এখন, এই দোকানদারের দাবীটি সত্য না মিথ্যা তা বোঝার জন্য তো আমার অন্য দোকানের দুধ কিনে এনে যাচাই করতে হবে, তাই না? নাকি শুধুমাত্র দোকানদার বলেছে, বা মিল্কভিটা কোম্পানির বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে, মিল্কভিটা দুধ সর্বশ্রেষ্ঠ- বাদবাকি সব দুধ ভেজাল, এই কারনেই মিল্কভিটা দুধ সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে যাবে! এটি তো একটি হাস্যকর কুয়ুক্তি।

কিন্তু ইসলাম অন্য ধর্ম সম্পর্কে যাচাই বাছাই, অন্য ধর্মগ্রন্থ পড়ে বুঝে শুনে সিদ্ধান্তে আসার প্রক্রিয়াকে নিষেধ করে। এই বিষয়ে দুইটি হাদিস প্রথমে পড়ে নিই [22] [23] –

হাদীস সম্ভার
১৩/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৫০৭) একদা উমার (রাঃ) তাওরাতের কয়েকটি পাতা নিয়ে পড়ছিলেন। তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে বললেন,
সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! যদি মুসাও জীবিত হয়ে এসে যান, আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসারী হয়ে যাও এবং আমাকে বর্জন কর, তাহলে অবশ্যই তোমরা ভ্রষ্ট হয়ে যাবে। 
নিশ্চয় উম্মতের মধ্যে তোমরা আমার অংশ এবং নবীগণের মধ্যে আমি তোমাদের অংশ। (আহমাদ ১৫৮৬৪, ১৮৩৩৫)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, যদি মূসা তোমাদের মাঝে জীবিত থাকতেন, তাহলে আমার অনুসরণ ছাড়া তাঁর জন্য অন্য কিছু বৈধ হতো না। (আহমাদ ১৪৬৩১, শুআবুল ঈমান বাইহাক্বী ১৭৯, আবূ য়্যা’লা ২১৩৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

হাদীস সম্ভার
১৩/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৫০৬) জাবের (রাঃ) বলেন, একদা উমার (রাঃ) এর হাতে একটি পাতা ছিল, যার মধ্যে তাওরাতের কিছু অংশ লিখা ছিল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে রাগাম্বিত হয়ে তাঁকে বললেন, আমার ব্যাপারে কি কোন সন্দেহ আছে হে ইবনে খাত্ত্বাব? আমি কি শুভ্র ও নির্মল শরীয়ত নিয়ে আগমন করিনি? যদি আমার ভাই মূসা জীবিত থাকতেন, তাহলে আমার অনুসরণ ছাড়া তাঁর অন্য কোন এখতিয়ার ছিল না। অন্য বর্ণনামতে উমার (রাঃ) তাঁর নিকট এসে বললেন, আমরা ইয়াহুদীদের নিকট কিছু এমন কথা শুনি যা আমাদেরকে ভালো লাগে। আপনার কী রায়, তার কিছু লিখে নেব কি? তা শুনে তিনি বললেন, তোমরাও কি নির্বিচারে সব কিছু মেনে নিতে চাও, যেমন ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা মেনে নিয়েছে? যদি মূসা জীবিত থাকতেন, তাহলে আমার অনুসরণ ছাড়া তাঁর অন্য কোন এখতিয়ার ছিল না।
(আহমাদ ১৫১৫৬, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)

আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ ইবনে বায সৌদি আরবের বিখ্যাত ইসলামী পন্ডিত এবং সালাফি মতাদর্শের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। ১৯৯৩ সাল থেকে তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সৌদি আরবের প্রধান মুফতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। উনার সরকারি ওয়েবসাইট থেকে এই বিষয়ে একটি ফতোয়া দেয়া হয়েছে, সেটি আমরা পড়ে নিই [24] –

حكم القراءة في كتب الأديان
السؤال:
في آخر أسئلة هذه السائلة تقول: هل يجوز لنا أن نقرأ في كتب الأديان الأخرى غير الإسلام من باب حب الاستطلاع والتعرف على الديانات الأخرى؟
الجواب:
لا ينبغي لا، لا ينبغي قراءة التوراة ولا الإنجيل ولا غيرها؛ لأنها قد تورث شكًا وشبهة، والرسول روي عنه ﷺ أنه لما رأى عمر يقرأ في شيء من التوراة قال: أفي شك يا ابن الخطاب؟ لقد جئتكم بها بيضاء نقية، لو كان موسى حيًا ما وسعه إلا اتباعي.
المقصود: أنه لا ينبغي للمسلم أن يقرأ الكتب الأخرى من التوراة والإنجيل وغيرها، إلا من تدعو الحاجة إلى قراءته كالعلماء الذين يريدون أن يردوا على اليهود والنصارى من كتبهم، فإذا دعت الحاجة للعالم الذي يرد عليهم ويبين أباطيلهم أن يراجع كتبهم حتى يرد عليهم منها فلا بأس عند الحاجة لأهل العلم والبصيرة. نعم.
المقدم: أحسن الله إليكم.

বাঙলায় ভাবানুবাদ,

প্রশ্ন:
কৌতূহলবশত ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পড়া কি আমাদের পক্ষে বৈধ?
উত্তর:
মুসলিমের জন্য তৌরাত, বাইবেল বা অন্য কোন ধর্মগ্রন্থ পড়া উচিত নয়; কারণ এর মাধ্যমে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি হতে পারে। এবং রসূলﷺ তাঁর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যখন তিনি উমরকে তওরাত থেকে কিছু পাঠ করতে দেখলেন, তখন তিনি বললেন: হে, ইবনে আল-খাত্তাব, তোমার কী ইসলাম নিয়ে কোন সন্দেহ আছে ? আমি তোমাদের জন্য খাঁটি সাদা নিয়ে এসেছি, যদি হযরত মুসা বেঁচে থাকতেন তবে তিনি কেবল আমার অনুসরণ করতেন ।
এ থেকে বোঝা যায়, আলেমদের ব্যতীত, যাদের জন্য এগুলো পড়া জরুরি, অন্য ধর্মের মিথ্যা ধরিয়ে দেয়ার জন্য, তারা শুধু অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ পড়তে পারবে।

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম প্রধান ইসলামিক স্কলার মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ এর প্রখ্যাত ওয়েবসাইট ইসলাম কিউএ তে এই বিষয়ে একটি উত্তর দেয়া হয়েছে, যা সৌদি আরবের সর্বোচ্চ আলেমদের দ্বারা সত্যায়িত। আসুন উত্তরটি পড়ে নিই। নিচে উত্তরটির বাঙলা অনুবাদ দেয়া আছে। অনুবাদ করেছেন শাহেদ খান [25] –

Ruling on studying the books of the People of the Book for the purpose of da‘wah (calling them to Islam), and the ruling on studying comparative religion.
Question
What ruling on studying the books of the People of the Book for the purpose of da‘wah (calling them to Islam), and the ruling on studying comparative religion?
Answer
Praise be to Allah.
Firstly:
The Torah and Gospel were originally from Allah, may He be exalted, and we are obliged to believe in them because Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“Say (O Muslims), ‘We believe in Allah and that which has been sent down to us and that which has been sent down to Ibraaheem (Abraham), Ismaa‘eel (Ishmael), Ishaaq (Isaac), Ya‘qoob (Jacob), and to Al-Asbaat (the twelve sons of Ya‘qoob (Jacob)), and that which has been given to Moosa (Moses) and ‘Eesa (Jesus), and that which has been given to the Prophets from their Lord. We make no distinction between any of them, and to Him we have submitted (in Islam)’”
(al-Baqarah 2:136)
“O you who believe! Believe in Allah, and His Messenger (Muhammad (blessings and peace of Allah be upon him)), and the Book (the Quran) which He has sent down to His Messenger, and the Scripture which He sent down to those before (him), and whosoever disbelieves in Allah, His Angels, His Books, His Messengers, and the Last Day, then indeed he has strayed far away”
(an-Nisa’ 4:136).
But the Torah and Gospel were subjected to distortion and changes. Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“Then woe to those who write the Book with their own hands and then say, “This is from Allah,” to purchase with it a little price! Woe to them for what their hands have written and woe to them for that they earn thereby”
(al-Baqarah 2:79).
Because of this distortion and the mixing of truth with falsehood in these two Scriptures, it is prohibited to study them.
It was narrated from Jaabir ibn ‘Abdullah (may Allah be pleased with him) that ‘Umar ibn al-Khattaab (may Allah be pleased with him) came to the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) with some written material he had got from one of the people of the Book. He read it to the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him), and he got angry and said: “Are you confused (about your religion), O son of al-Khattaab? By the One in Whose hand is my soul, I have brought it (the message of Islam) to you clear and pure. Do not ask them about anything, lest they tell you something true and you disbelieve it, or they tell you something false and you believe it. By the One in Whose hand is my soul, if Moosa were alive, he would have no option but to follow me.”
Narrated by Ahmad (14736); classed as hasan by al-Albaani in Irwa’ al-Ghaleel, 6/34
Al-Haafiz Ibn Hajar (may Allah have mercy on him) said, after mentioning the isnaads of this hadith:
These are all the isnads of this hadith; even though it does not reach such a standard that it may be relied upon as evidence, when they are all taken into consideration, this implies that there is a basis for this report.
End quote from Fath al-Baari (13/525)
Moreover, the truth that we have in the Holy Qur’an means that there is no need for whatever truth may be in the Torah and Gospel.
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“Is it not sufficient for them that We have sent down to you the Book (the Quran) which is recited to them? Verily, herein is mercy and a reminder (or an admonition) for a people who believe”
(al-‘Ankaboot 29:51).
Ibn Taymiyah (may Allah have mercy on him) said:
Because the Qur’an is the best of speech, they were prohibited to follow anything else. Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“Is it not sufficient for them that We have sent down to you the Book (the Quran) which is recited to them? Verily, herein is mercy and a reminder (or an admonition) for a people who believe”
(al-‘Ankaboot 29:51).
An-Nasaa’i and others narrated from the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) that he saw a page of the Torah in the hand of ‘Umar ibn al-Khattaab (may Allah be pleased with him). He said: “If Moosa were alive, and you were to follow him and leave me, you would go astray.” According to another report: “… he would have no option but to follow me.” According to another version: The face of the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) changed when ‘Umar showed that to him, and one of the Ansaar said to him: O son of al-Khattaab, do you not see the face of the Messenger of Allah (blessings and peace of Allah be upon him)? ‘Umar said: I am content with Allah as my Lord, Islam is my religion, and Muhammad as my Prophet.
Hence the Sahaabah forbade the study of any book other than the Qur’an.
End quote from Majmoo‘ al-Fataawa (17/41-42)
Hence Ibn ‘Abbaas (may Allah be pleased with him) used to say:
How can you ask the people of the Book about anything, when your Book that was revealed to the Messenger of Allah (blessings and peace of Allah be upon him) is more recent, and you read it pure and not tampered with? And He has told you that the People of the Book altered the Book of Allah and changed it, and they wrote the Book with their own hands, and said that it is from Allah, to purchase with it a little price. Does not the knowledge that has come to you forbid you to ask them about anything? No, by Allah, we have not seen any man among them ask you about that which was revealed to you.
Narrated by al-Bukhaari (7363).
Moreover, focusing on the Torah and Gospel is a distraction from that which will benefit the Muslim with regard to his Hereafter.
Al-Qurtubi (may Allah have mercy on him) said:
If the one who reads it – namely the Qur’an – will have a tenfold reward or more for each letter, according to what we mentioned in the introduction to this book, then turning away from it and towards other Books is misguidance and loss, and it is a bad deal and waste of time.
End quote from al-Jaami‘ li Ahkaam al-Qur’an (16/37 8)
Secondly:
Based on the above, the scholars (may Allah have mercy on them) are of the view that those who study these books – the books of the Jews and Christians – may be divided into two groups:
-1-
The first group is ordinary people, those who have no knowledge and those who are weak in faith. They are not allowed to study these books so that they will not be confused by that which has been introduced into them of falsehood, and so that they will not be distracted by something that is of no benefit.
Al-Haafiz Ibn Hajar (may Allah have mercy on him) said:
With regard to this matter, it is important to note that in the case of those who are not well-versed in knowledge and are lacking in faith, it is not permissible for them to read any of those books.
End quote from Fath al-Baari (13/525)
With regard to this group – ordinary people and those who come under the same heading, or those who seek to benefit in spiritual terms from those books – these are the ones who the scholars stated should not be allowed to read the Torah and Gospel.
It says in Mataalib Ooli an-Nuha (1/607):
It is not permissible to study the books of the people of the Book, based on textual evidence, because the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) got angry when he saw ‘Umar (may Allah be pleased with him) carrying a page of the Torah. … And they should not read books that contain both truth and falsehood, or narrate what they learn from them, because that may be detrimental to belief. End quote.
An-Nawawi (may Allah have mercy on him) said:
The books of the Torah and Gospel are among the things that it is prohibited to seek benefit therein, because they changed and altered them.
End quote from Rawdat at-Taalibeen (10/259)
Shaykh ‘Abd al-‘Azeez ibn Baaz (may Allah have mercy on him) said:
Every Muslim is obliged to believe in them and that they (originally) came from Allah: the Torah, the Gospel and the Psalms (Zaboor). So he believes that Allah sent down the Books to the Prophets, and He sent down to them Scriptures containing commands and prohibitions, exhortation and reminders, stories of some events in the past, descriptions of Paradise and Hell, and so on. But he should not read them, because distortions, alterations and changes have been introduced into them. So he should not keep copies of the Torah, Gospel or Psalms, or read them, because doing that is risky, as it may lead to him disbelieving something that is true or believing something that is false. That is because these books have been distorted and changed, and those Jews, Christians and others have introduced alterations and distortions into them, changing the order of things in some cases. Allah has given us a great Book which means that we have no need of them, namely the Holy Qur’an.
End quote from Fataawa Noor ‘ala ad-Darb (1/9)
Shaykh Ibn ‘Uthaymeen (may Allah have mercy on him) was asked:
is it permissible for a Muslim to keep a copy of the Gospel in order to find out what Allah said to His slave and Messenger ‘Eesa (peace be upon him)?
He replied:
It is not permissible to keep anything of the Scriptures that came before the Qur’an, be it the Gospel, Torah or anything else, for two reasons:
1. because everything in them that is beneficial Allah, may He be glorified and exalted, has explained it in the Holy Qur’an;
2. there is no need for any of these books because we have the Qur’an. Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning): “It is He Who has sent down the Book (the Quran) to you (Muhammad SAW) with truth, confirming what came before it” (Aal ‘Imraan 3:3) and “And We have sent down to you (O Muhammad (blessings and peace of Allah be upon him)) the Book (this Quran) in truth, confirming the Scripture that came before it and Muhayminan (trustworthy in highness and a witness) over it (old Scriptures). So judge between them by what Allah has revealed” (al-Maa’idah 5:48). Whatever of good there is in the previous scriptures is also to be found in the Qur’an.
With regard to the questioner saying that he wants to find out what Allah said to His slave and Messenger ‘Eesa, we can find what is most beneficial of that in what Allah has told us in the Qur’an, so there is no need to look elsewhere. Moreover, the Gospel as it exists at present has been distorted. The evidence for that is that there are four Gospels which differ from one another; there is not one single Gospel, therefore it cannot be relied upon.
End quote from Majmoo‘ Fataawa wa Rasaa’il Ibn ‘Uthaymeen (1/32-33)
-2-
The second category of people is those who are well versed in knowledge, who use these books to debate with the Jews and Christians, and to establish proof against them.
In this case the fear of confusion is less, because the one who is well versed in knowledge has the ability to recognise the falsehood that has been introduced into these books and to be cautious of it, and to refute it and warn others against it. Moreover, by refuting the people of the Book and their falsehood, he is serving an important shar‘i interest that must be served.
Hence many scholars read these books for the purpose of debating with the Jews and Christians. Among the most famous of those who refuted the Jews and Christians by quoting their own books to them were: Ibn Taymiyah, in his book al-Jawaab as-Saheeh liman baddala Deen al-Maseeh (The Correct Response to those who altered the Religion of the Messiah); Ibn al-Qayyim in his book Hidaayat al-Hayaara fi Ajwibat al-Yahood wa’n-Nasaara (Guiding to the Confused in Refuting the Jews and Christians); Ibn Hazm in his book al-Fasl fi’l-Milal wa’l-Ahwa’ wa’n-Nahl (Discussion of the Views of Different Religions, Groups and Sects); al-Qurtubi in his book al-I‘laam bima fi Deen an-Nasaara min al-Fasaad wa’l-Awhaam (Highlighting what the Religion of the Christians contains of Corruption and Myths); and many others.
Al-Haafiz Ibn Hajar (may Allah have mercy on him) said:
… unlike the one who is well versed in knowledge. For him it is permissible to read in the Torah and Gospel, especially when he needs to refute an opponent. This is indicated by the fact that the imams (leading scholars), both in the past and more recently, quoted from the Torah to prove to the Jews that they should believe in Muhammad (blessings and peace of Allah be upon him) on the basis of what they found in their book. If they did not believe that it was permissible to read it, they would not have done that and persisted in doing so, generation after generation.
End quote from Fath al-Baari (13/525-526)
Ibn Taymiyah (may Allah have mercy on him) said:
If it so happens that there are some of the people of the Book who convert to Islam, and they have knowledge of what they have in their language and can translate it to us in Arabic, that may be useful when debating with the Jews and Christians or talking to them, as ‘Abdullah ibn Salaam, Salmaan al-Faarisi, Ka‘b al-Ahbaar and others did; they transmitted what they had of knowledge. In that case we may quote what they have that is in harmony with what the Messenger brought, and that will be proof against them in some ways and against others in other ways, as we have explained elsewhere.
End quote from Majmoo‘ al-Fataawa (4/109-110)
In Mataalib Ooli an-Nuha (1/607-608), which is a Hanbali book, it says:
The idea of it being permissible to read in the books of the innovators may be applicable for one who is well versed in the Qur’an and Sunnah, if he is also very steadfast, strong in faith, smart and alert, very intelligent, and able to derive evidence in order to refute them, discover their secrets and expose them, so that ignorant people will not be taken in by their deceiving arguments and thus become confused. This was done by leading scholars among the best of the Muslims, and they presented strong arguments against the innovators that the latter could not find an answer to. Similarly, they looked in the Torah and found in it mention of our Prophet in many locations; the permissibility of looking in their Book is also applicable in that case. End quote.
The Standing Committee for Academic Research and Issuing Fatwas was asked: what is the ruling on reading the Gospel?
They replied:
The earlier divinely revealed Books have been subjected to a great deal of distortion, additions and subtractions, as Allah has told us. Hence it is not permissible for the Muslim to read them and study them, unless he is one of those who are well versed in knowledge and wants to highlight the distortions and contradictions in those books.
End quote from Fataawa al-Lajnah ad-Daa’imah – vol. 1 (3/311)
Shaykh ‘Abd al-‘Azeez ibn Baaz (may Allah have mercy on him) said:
It is permissible for the well versed scholar to read them in order to refute the opponents of Islam among the Jews and Christians, as the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) called for the Torah when the Jews denied the ruling of stoning, so that he could look at it, and after that they admitted it.
The point is that the scholars who have knowledge of Islam may need to look at the Torah, Gospel or Psalms for an Islamic purpose, such as refuting the enemies of Allah, or highlighting the virtue of the Qur’an and what it contains of truth and guidance. As for the common folk and others like them, they should not do any such thing. Rather if they have anything of the Torah, Gospel or Psalms, they must bury it in a clean place or burn it, so that no one will be led astray by it.
End quote from Fataawa Noor ‘ala ad-Darb (1/10)
Shaykh Ibn ‘Uthaymeen (may Allah have mercy on him) said:
As for the seeker of knowledge who has sufficient knowledge that enables him to distinguish truth from falsehood, there is nothing wrong with him learning about them – namely the Gospels – in order to refute what they contain of falsehood and establish proof against their followers.
End quote from Majmoo‘ Fataawa wa Rasaa’il Ibn ‘Uthaymeen (1/33)
To sum up, for the daa‘iyahs who call people to Allah, may He be exalted, to use the texts of the Torah and Gospel in order to refute the Jews and Christians and highlight their misguidance, this is something that is prescribed and is not an innovation. Rather it is a matter for which there is a basis in the Qur’an and Sunnah.
Ibn Taymiyah (may Allah have mercy on him) said:
If someone among them is disputing and wants to quote something to undermine the Qur’an on a textual or rational basis, such as quoting something from their books about the Prophets that is contrary to what was brought by Muhammad (blessings and peace of Allah be upon him), or is contrary to what Allah said in their Books, such as when they told the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) that Allah had commanded them to blacken the face of the adulterer, and not stone him, the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) and the believers were able to ask for the Torah and for a trustworthy translator who could read it and translate it into Arabic, such as ‘Abdullah ibn Salaam and others like him. When he said to their rabbi: “Lift up your hand and expose the verse of stoning,” the verse became visible, and the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) stoned the two Jewish adulterers, after having established proof against them from their own book that was in accordance with what Allah had revealed to him about stoning.
Likewise, it is possible to read from a translation of it in order to learn what they have, via a trustworthy Muslim translator or those among us who know their language, as in the case of Zayd ibn Thaabit and others like him. … Hence Allah, may He be exalted, said (interpretation of the meaning): “All food was lawful to the Children of Israel, except what Israel made unlawful for himself before the Tawraat (Torah) was revealed. Say (O Muhammad (blessings and peace of Allah be upon him)): “Bring here the Tawraat (Torah) and recite it, if you are truthful” (Aal ‘Imraan 3:93).
Allah has instructed us to ask them to bring the Torah and recite it, if they are being truthful in quoting something that is contrary to that. For they used to “distort the Book with their tongues (as they read), so that you may think it is from the Book, but it is not from the Book” (Aal ‘Imraan 3:78), and “write the Book with their own hands and then say, ‘This is from Allah’” (al-Baqarah 2:79). So they used to lie in what they said and what they wrote; hence a translation can only be accepted from one who is trustworthy.
If one of them quotes a report from the previous Messengers as evidence for something that is contrary to the Qur’an, such as those who say that Moosa said, “Adhere to observance of the Sabbath so long as heaven and earth endure,” we can say to them: “In which book is this? Bring it (and show us).” For we know that this is not in their Books; rather it is nothing but a fabrication.
End quote from Majmoo‘ al-Fataawa (4/110-112)
And Allah knows best.

আসুন এবারে এর অনুবাদটি পড়ি- অনুবাদকঃ শাহেদ খান

প্রশ্ন: দাওয়াহ (ইসলাম এর পথে আহবান) এর উদ্দেশ্যে আহলে কিতাব দের (খ্রিস্টান, ইহুদি) ধর্ম গ্রন্থ সমূহ এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে অধ্যয়ন বা শিক্ষা অর্জন এর ব্যাপারে ইসলাম এর হুকুম কি?
উত্তর:
সকল প্রশংসা আল্লাহর।
প্রথমত:
প্রকৃতপক্ষে তাওরাত এবং গসপেল আল্লাহর পক্ষ হতে নাজিল কৃত এবং এটা আমাদের বিশ্বাসের অংশ কেননা আল্লাহ বলেন:
“তোমরা বলঃ আমরা আল্লাহর প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, আর যা ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তদীয় বংশধরগণের (ইয়াকূব এর ১২ পূত্র) প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল এবং যা মূসা ও ঈসাকে প্রদান করা হয়েছিল এবং অন্যান্য নাবীগণকে তাদের রাব্ব হতে যা প্রদত্ত হয়েছিল, তদসমুদয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করছি, তাদের মধ্যে কেহকেও আমরা প্রভেদ করিনা, এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী।” (আল বাকারা ২: ১৩৬ )
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূলের, তাঁর রসূলের নিকট তিনি অবতীর্ণ করেছেন সেই কিতাবের এবং পূর্বে নাযিলকৃত কিতাবের উপর ঈমান আন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও তাঁর ফেরেশতাদেরকে, তাঁর কিতাবসমূহকে, তাঁর রসূলগণকে এবং শেষ দিবসকে অস্বীকার করে নিশ্চয়ই সে সীমাহীন পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়েছে।”(আন নিসা ৪:১৩৬ )
কিন্তু তাওরাত এবং গসপেলে অনেক বিকৃতি এবং পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন:
“সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে। তারপর বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, যাতে তা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা লিখেছে তার পরিণামে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস।” (আল বাকারা ২:৭৯ )
এই দুই কিতাবের বিকৃতি এবং সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণের কারনে তা পাঠ করা নিষিদ্ধ।
“জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একদা উমার (রাঃ) এক ইহুদীর নিকট হতে প্রাপ্ত কিছু লেখা নিয়ে নবী (সা:) এর নিকট আসলেন । তিনি সেটা নবী(সা:) কে পড়ে শোনালে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, ওহে খাত্তাব এর পুত্র তুমি কি দ্বিধাগ্রস্ত (তোমার দ্বীনের ব্যাপারে) হয়ে পড়েছ? কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, আমি তোমাদের কাছে একটি অতি পবিত্র ও স্বচ্ছ দ্বীন নিয়ে এসেছি। তাদের কে কোনো কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না, আমি ভয় করি তারা হয়তো কোনো কিছু সত্য বলবে এবং তোমরা তা অবিশ্বাস করবে, অথবা তারা কোন কিছু মিথ্যা বলবে এবং তোমরা সেটা বিশ্বাস করবে। কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, মূসা (আঃ)-ও যদি আজ দুনিয়ায় বেঁচে থাকতেন, আমার অনুসরণ ব্যতীত তাঁর পক্ষেও অন্য কোন উপায় ছিল না।”
আহমাদ (১৪৭৩৬) কতৃক বর্নিত; হাদীসের মান: হাসান, সূত্র: আলবানী: ইরওয়া আল ঘালিল, ৬/৩৪
এই হাদীসের সনদ উল্লেখ করে আল হাফিজ ইবনে হাযার বলেন:
এগুলো এই হাদিসের সনদ সমগ্র; যদিও এগুলো প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করার মতো যথোপযুক্ত মান এ পৌঁছায় না, তবে সমগ্র সনদ সমূহ যখন একত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়, তখন এটা প্রতীয়মান হয় যে এই বর্ণনা গ্রহণ করার মত যথেষ্ঠই ভিত্তি রয়েছে।
( ফাতহুল বারি (১৩/৫২৫ ) এর শেষক্তি )
উপরন্তু, পবিত্র কোরআন থেকে আমরা যে সত্য বাণী প্রাপ্ত হয়েছি তাতে তাওরাত এবং গসপেল এ যে সত্যই বর্নিত থাকুক না কেনো সেটা আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ বলেনঃ
“এটা কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, আমরা আপনার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়। এতে তো অবশ্যই অনুগ্রহ ও উপদেশ রয়েছে সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা ঈমান আনে।”
(আল অনকাবুত ২৯:৫১)
ইবনে তাইমিয়া বলেন:
কুরআন যেহেতু সমগ্র বাণী সমূহের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট তাদেরকে কুরআন ব্যতীত অন্য যে কোনো কিছু অনুসরণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আল্লাহ বলেনঃ
“এটা কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, আমরা আপনার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়। এতে তো অবশ্যই অনুগ্রহ ও উপদেশ রয়েছে সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা ঈমান আনে।”
(আল অনকাবুত ২৯:৫১)
আন-নাসা’ই এবং অন্যরা নবী (সা:) হতে বর্ণনা করেন যে তিনি উমার ইবনে আল খাত্তাব (রা:) এর হাতে তাওরাত এর একটি পৃষ্ঠা দেখতে পান। তিনি বললেন: “যদি মূসা জীবিত থাকতেন এবং তুমি তাকে অনুসরণ করতে এবং আমাকে ত্যাগ করতে, তবে তুমি বিপথে পরিচালিত হতে।”
অন্য বর্ণনা মতে: “…….তাঁর পক্ষেও অন্য কোন উপায় ছিল না আমার অনুসরণ ব্যতীত।”
অপর আর একটি ভাষ্য মতে: নবী (সা:)এর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেলো যখন উমার তাকে সেটা দেখালেন এবং এক জন আনসার তাকে বললেন: ওহে খাত্তাব এর পুত্র, তুমি কি আল্লাহর নবীর (সা:) চেহারা মোবারক দেখছো না? ‘উমার বললেন: আমার জন্য এটাই যথেষ্ঠ যে আল্লাহ আমার রব, ইসলাম আমার ধর্ম এবং মুহাম্মদ আমার নবী।
এই কারনে সাহাবা গণ কুরআন ব্যতীত অন্য যে কোনো কিতাব পড়তে নিষেধ করেছেন। (মাজমু’ আল – ফাতওয়া (১৭/৪১-৪২)এর শেষক্তি )
একই কারনে ইবনে আব্বাস বলতেন:
কিভাবে তোমরা আহলে কিতাবদের কাছে কোনো কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পার, যেখানে তোমাদের কিতাব, যেটা নাযিল হয়েছে আল্লাহর নবীর প্রতি; আরো সম সাময়িক, নির্ভেজাল এবং অবিকৃত? এবং তিনি তোমাদের জানিয়েছেন যে আহলে কিতাব রা আল্লাহর কিতাব বিকৃত করেছে এবং এতে পরিবর্তন সাধন করেছে এবং তারা নিজ হাতে কিতাব লিখেছে এবং ঘোষণা করেছে যে এটা আল্লাহর পক্ষ হতে, যাতে এর বিনিময়ে সামান্য অর্থ উপার্জন করতে পারে। তোমাদের কাছে যে ইল্‌ম আছে তা কি তোমাদেরকে তাদের কাছে কোন মাসআলা জিজ্ঞেস করতে নিষেধ করছে না?আল্লাহ্‌র কসম! আমরা তো তাদের কাউকে দেখিনি কখনো তোমাদের উপর নাযিল করা কিতাব সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করতে। (আল – বুখারী ( ৭৩৬৩ ) হতে বর্ণিত )
উপরন্তু, তাওরাত এবং গসপেল এর উপর মনোযোগ, মুসলিমদের যেটা পরকালে উপকারে আসবে সেখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাবে।
আল – কুরতুবী বলেন:
কেউ যদি কুরআন পাঠ করে – তাহলে সে প্রতি হরফে দশ গুণ বা তার বেশি সওয়াব অর্জন করবে, যা এই কিতাব এর সূচনা লগ্নে বর্ণিত হয়েছে, এর পর কেউ যদি এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অন্য কিতাব সমূহের মুখাপেক্ষী হয় তবে তা পথভ্রষ্টতা এবং ক্ষতিকর, এবং ইহা একটি বাজে কাজ এবং সময়ের অপচয় মাত্র।
(আল – জামি লি আহকাম আল – কুরআন (১৬/৩৭ ৮)এর শেষক্তি )
দ্বিতীয়ত:
উপর্যুক্ত আলোচনা অনুযায়ী, আলেম গণ মত প্রকাশ করেন যে যারা এই সমস্ত কিতাব অধ্যয়ন করে – ইহুদী এবং খৃষ্টানদের কিতাব সমূহ – তাদের কে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়:
1 –
প্রথম শ্রেণীভুক্তরা সাধারণ মানুষ, যাদের কোন জ্ঞান নেই এবং যাদের ঈমান দুর্বল। তাদের জন্য এই সব কিতাব পড়ার কোন অনুমতি নেই যাতে তারা এখানে অন্তর্ভুক্ত মিথ্যার দ্বারা বিভ্রান্ত না হয় এবং তারা যেন পথভ্রষ্ট না হয় এমন কিছুর দ্বারা যাতে কোন কল্যাণ নেই।
আল – হাফিজ ইবনে হাজার বলেনঃ
এই বিষয়ে এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, যাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই এবং ঈমানেও দুর্বলতা আছে, তাদের জন্য এই সমস্ত কিতাব সমূহ থেকে কোন কোন কিতাব ই পড়ার অনুমোদন নেই। (ফাতহুল বারি (১৩/৫২৫) এর শেষক্তি।)
এই শ্রেণীভুক্ত দের ব্যপারে – সাধারণ মানুষ এবং যারা একই শ্রেণীভুক্ত অথবা যারা এই সব কিতাব সমূহ হতে আধ্যাত্মিক ভাবে কল্যাণ পেতে চায় – এরাই তারা যাদেরকে আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে তাদের জন্য অনুমোদিত নয় তাওরাত এবং গসপেল পড়া।
মাতালিব উলি আন নুহা (১/৬০৭) হতে বর্ণিত:
পাঠ্য প্রমাণ এর ভিত্তিতে আহলে কিতাব দের কিতাব সমূহ পাঠ করা অনুমোদিত নয়। কারন নবী (সা:) রাগান্বিত হয়েছিলেন যখন তিনি উমার (রা:) কে তাওরাত এর একটি পৃষ্ঠা বহন করতে দেখেছিলেন।…… এবং তাদের উচিত নয় সেই সমস্ত কিতাব পড়া যাতে আছে সত্য এবং মিথ্যা উভয়ের মিশ্রণ অথবা বর্ণনা করা যা তারা সেখান থেকে শিখেছে কেননা তা তাদের বিশ্বাসের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। (শেষ উক্তি)
আন নবাবী বলেছেনঃ
তাওরাত এবং গসপেল সেই সমস্ত জিনিসের অন্তর্ভুক্ত যেখান থেকে কোন কল্যাণ কামনা করা নিষিদ্ধ কারন তারা ওগুলো পরিবর্তন এবং বিকৃত করে ফেলেছে। (রাউদাত আত – তালিবীন (১০/২৫৯ ) এর শেষক্তি )
শাইখ আব্দুল আজিজ ইবনে বাজ বলেছেনঃ
প্রত্যেক মুসলিম তাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে বাধ্য এবং এগুলো (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহর কাছ থেকে নাজিল হয়েছে: তওরাত, গসপেল এবং যবুর। এজন্য তিনি বিশ্বাস করেন আল্লাহ নবী গণের উপর এ সমস্ত কিতাব নাজিল করেছেন এবং তিনি তাদের কাছে ধর্ম গ্রন্থ পাঠিয়েছেন যাতে আছে আদেশ, নিষেধ, উপদেশ এবং অনুস্মারক, ইতিহাসের কিছু ঘটনার বর্ণনা, জান্নাত এবং জাহান্নামের বর্ণনা এবং আরো অনেক কিছু। কিন্তু কারো ওগুলো পড়া উচিৎ নয় কারন তাতে বিকৃত, পরিবর্তন ও পরিমার্জন সংযোজিত হয়েছে। এজন্যে করো কাছে তাওরাত, গসপেল ও যবুর এর কোনো অনুলিপি রাখা এবং তা পড়া উচিৎ নয়, কারন তা করা ঝুঁকিপূর্ণ যেহেতু এটা তাদের কে ধাবিত করতে পারে এমন কিছু অবিশ্বাস করতে যা আসলে সত্য অথবা এমন কিছু বিশ্বাস করতে যা আসলে মিথ্যা। এটা এই কারনে যে এই কিতাব সমূহ বিকৃত এবং পরিবর্তিত হয়েছে এবং ইহুদী, খৃষ্টান এবং অন্যরা এগুলোতে পরিবর্তন এবং বিকৃতি সংযোজন করেছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ের ক্রম পরিবর্তন করেছে। আল্লাহ্ আমাদের কুরআনের মত একটি মহান কিতাব দিয়েছেন যার অর্থ হলো আমাদের ওই সমস্ত কিতাব সমূহের কোন ই প্রয়োজন নেই। (ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারব (১/৯) এর শেষক্তি )
শাইখ ইবনে উছাইমীন কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:
আল্লাহ তাঁর বান্দা দের এবং ঈসা নবীকে কি বলেছিলেন তা জানার জন্য কোনো মুসলিম এর কাছে কি গসপেল এর কোনো প্রতিলিপি রাখা জায়েজ?
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন:
কুরআন এর আগে আগত কোনো আসমানী কিতাবের কোনো কিছুই রাখা অনুমোদিত নয় তা সেটা গসপেল, তওরাত বা অন্য যা কিছুই হোক না কেন। এর পিছনে দু’টি কারন রয়েছেঃ
১. কারন তার মধ্যে যা কিছু কল্যাণকর রয়েছে তা মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন।
২. এই সমস্ত কিতাব সমূহের কোনোই প্রয়োজন নেই কারন আমাদের কাছে কুরআন রয়েছে। আল্লাহ্ বলেন: “তিনি সত্যসহ আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, পূর্বে যা এসেছে তার সত্যতা প্রতিপন্নকারীরূপে। আর তিনি নাযিল করেছিলেন তাওরাত ও ইঞ্জীল।” (আলে ইমরান ৩:৩) এবং “আর আমরা আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছি ইতোপূর্বেকার কিতাবসমূহের সত্যতা প্রতিপন্নকারী ও সেগুলোর তদারককারীরূপে। সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী আপনি তাদের বিচার নিষ্পত্তি করুন ” (আল-মায়ীদাহ্ ৫:৪৮)।
পূর্বেকার কিতাব সমূহে যা কিছু ভালো আছে তা কুরআনে ও বিদ্যমান।
প্রশ্নকর্তা যে আল্লাহ্ তার বান্দাহ ও ঈসা নবীকে কি বলেছিলেন সেটা খুঁজে বের করতে চান তার এই প্রশ্নের সাপেক্ষে এটা বলা যায় যে, আল্লাহ্ যা যা বলেছেন তার মধ্যে যেটা সর্বাধিক কল্যাণকর তা আমরা কুরআনেই খুঁজে পেতে পারি , এজন্য অন্য কোথাও কিছু দেখার কোনো প্রয়োজন নেই। উপরন্তু, বর্তমানে যে গসপেল পাওয়া যায় তা বিকৃত হয়ে গিয়েছে। এর প্রমাণ হলো বর্তমানে ৪ টি গসপেল পাওয়া যায় যা একটি থেকে আরেকটি ভিন্ন; কোনো একক গসপেল এর অস্তিত্ব নেই, এ জন্য এর উপর ভরসা করা যায় না। (মাজমু ফাতওয়া ওয়া রাসা ইল ইবনে উসাইমীন (১/৩২-৩৩) এর শেষোক্তি)
২ –
দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত মানুষ তারা যাদের উপযুক্ত জ্ঞান আছে, যারা এই কিতাব সমূহ ব্যাবহার করে ইহুদী এবং খৃষ্টান দের সাথে বিতর্ক করার জন্য এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ স্বরূপ উপস্থাপনের জন্য।
এ ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম, কারন যে ব্যক্তি জ্ঞানে পারদর্শী তার সক্ষমতা আছে এই সমস্ত কিতাব সমূহে যে মিথ্যা ঢোকানো হয়েছে তা সনাক্ত করার এবং তা থেকে সতর্ক থাকার এবং এগুলো ভুল প্রমাণ করার এবং অন্যদের এর বিরুদ্ধে সতর্ক করার। উপরন্তু আহলে কিতাব এবং তাদের মিথ্যা কে খন্ডন করার মাধ্যমে সে একটি গুরুত্বপূর্ণ শার’ঈ দায়িত্ব পালন করছে যা তার অবশ্যই করা উচিৎ।
এজন্য অনেক আলেমগণ ইহুদী এবং খৃষ্টানদের সাথে বিতর্ক করার উদ্দশ্যে এই কিতাব সমূহ পাঠ করে থাকেন। যে সব আলেমগণ ইহুদী এবং খৃষ্টানদের তাদের নিজ কিতাব থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে ভুল প্রমাণ করেছেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাতরা হলেন: ইবনে তাইমিয়াহ, তাঁর গ্রন্থ আল-জাওয়াব আল-সাহীহ লি-মান বাদ্দালা দ্বীন আল মাসিহ (“এমন লোকদের প্রতি যথাযথ প্রতিক্রিয়া যারা মসিহের দ্বীন (ধর্ম)কে দূষিত করেছে); ইবনে আল-কাইয়্যিম তাঁর গ্রন্থ হিদায়াত আল হায়ারা ফী আজভিবাতিল- ইয়াহুদ ওয়া’ন – নাসারা; ইবনে হাজম তাঁর গ্রন্থ আল -ফাজল ফি’ল- মিলাল ওয়া’- আহওয়া ওয়া’ন- নাহল; আল- কুরতুবী তার গ্রন্থ আল – ই’লাম বিমা ফী দ্বীন আন-নাসারা মিন আল- ফাসাদ ওয়া’ল আওহাম এবং আরো অনেকে।
আল -হাফিজ ইবনে হাজার বলেছেন:
…… সেই ব্যক্তির মত নয় যে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অধিকারী। তার জন্য তওরাত এবং গসপেল পড়া অনুমোদিত, বিশেষত যখন তার প্রতিপক্ষের যুক্তি খন্ডন করা প্রয়োজন। এটা এই ঘটনা থেকে নির্দেশিত যে- অতীত এবং সাম্প্রতিক সময়ের ইমামগণ তাওরাত থেকে উদ্ধৃতি ব্যবহার করে, যা তারা তাদের কিতাব থেকেই খুঁজে পেয়েছেন, ইহুদীদের কাছে এটা প্রমাণ করতে যে তাদের উচিৎ মুহাম্মদ কে বিশ্বাস করা । যদি তারা এটা বিশ্বাস না করতেন যে, এটা পড়া তাদের জন্য বৈধ তবে তারা সেটা করতেন না এবং যুগের পর যুগ ধরে সেটা চলে আসত না। (ফাতহুল বারী ( ১৩/৫২৫-৫২৬)) এর শেষোক্তি)
ইবনে তাইমিয়া বলেছেন:
যদি এরূপ ঘটে যে কোনো আহলে কিতাব ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং তাদের সে বিষয়ে জ্ঞান রয়েছে যা তাদের ভাষায় রচিত এবং সেটা আমাদের কাছে আরবীতে অনুবাদ করতে পারে, সেটা ইহুদী এবং খৃষ্টানদের সাথে বিতর্কের সময় আমাদের উপকারে আসতে পারে যেমনটি আবদুল্লাহ্ ইবনে সালাম, সালমান আল ফারেসি, কাব আল আহবার এবং অন্যরা করেছিলেন; তারা তাদের কাছে থাকা জ্ঞান বিতরণ করেছিলেন। সেক্ষেত্রে তাদের সেই বাণী গুলো আমরা উদ্ধৃত করতে পারি যা নবীর বাণীর সাথে মিলে যায় এবং যেটা কিছু ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে ব্যাবহার করা যায় এবং অন্যদের ক্ষেত্রে অন্য ভাবে যেমনটা আমরা অন্য জায়গা তেও ব্যাখ্যা করেছি। (মাজমু আল ফাতাওয়া (৪/১০৯-১১০) এর শেষোক্তি)

ইসলামওয়েব হচ্ছে আরো একটি বিখ্যাত ফতোয়ার ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে একটি ফতোয়া দেখে নিই, [26] –

How ‘Umar read the Torah
Fatwa No: 126061
Fatwa Date:11-8-2009
Question
Salamualaikum
Dear Scholar I would like to ask based on the Hadith in which Hazrat Umar( R.A) was reading the Torah and the Prophet forbade him.So my question is how come Umar(R.A) was reading the Torah whose language was Arabic and the first Bible came after him?
Answer
All perfect praise be to Allaah, The Lord of the Worlds. I testify that there is none worthy of worship except Allaah, and that Muhammad, sallallaahu ‘alayhi wa sallam, is His Slave and Messenger.
Apparently, ‘Umar may Allaah be pleased with him was reading a copy of the Torah translated into Arabic, as the Jews used to translate the Torah into Arabic. Abu Hurayrah may Allaah be pleased with him said, “The people of the Scripture (Jews) used to recite the Torah in Hebrew and explain it in Arabic to the Muslims. On that, the Messenger of Allaah, sallallaahu ‘alayhi wa sallam, said, “Do not believe the people of the Scripture or disbelieve them, but say: {We believe in Allaah and what is revealed to us.}(Quran 2:136).” (Al-Bukhari)
This was explicitly stated in another version of this Hadeeth narrated by Al-Bazzaar on the authority of Jaabir may Allaah be pleased with him. He said, “‘Umar copied part of the Torah in Arabic, brought it to the Prophet, sallallaahu ‘alayhi wa sallam, and began to read it to him. As he read, the Prophet’s face changed color. One of the men of the Ansaar said, “Woe to you Ibn Al-Khattaab! Can you not see the face of the Messenger of Allaah?’ Thereupon, the Prophet, sallallaahu ‘alayhi wa sallam, said, ‘Do not ask the People of the Book about anything for they will not guide you when they have gone astray. (If you listen to them) You will either disbelieve in what is right or believe in what is false. By Allaah, if Moses had been alive today, he would have been obliged to follow me.’” (Al-Haafith Ibn Hajar may Allaah have mercy upon him said that one of its narrators is Jaabir Al-Ju‘fi and he is a weak narrator) For more benefit, see Fatwa 83344.‏
Allaah Knows best.

চিন্তার স্বাধীনতা কী ইসলামে বৈধ?

এবারে আসুন ইসলামে চিন্তার স্বাধীনতা বিষয়ে শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেদ আল উসাইমীনের একটি প্রখ্যাত ফতোয়া দেখে নিই [27] –

যাচাই 26

শিশুদের ধর্মশিক্ষা

শিশুরা আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন। শিশুদের আমরা যা শেখাই, তারা সেটিই শেখে। একটি শিশু যদি একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়, স্বাভাবিকভাবেই তার পিতামাতা তাদের ইসলাম ধর্মের দীক্ষা দেয়। আবার সে যদি হিন্দু ধর্মের পরিবারে জন্ম নেয়, তাকে শেখানো হয় হিন্দু ধর্মের নিয়মকানুন। সাধারণভাবে কোন শিশুই আসলে জানে না, কোন ধর্মটি সত্য, কোন ধর্মটি মিথ্যা। যাচাই করে দেখা, বুদ্ধি জ্ঞান প্রজ্ঞা দিয়ে নির্ধারণ করা তার পক্ষে আসলে সম্ভব নয়। তার পিতামাতা যদি তাকে শেখায় হিন্দু ধর্মই সত্য, ইসলাম মিথ্যা, তাহলে সে সেই শিক্ষা নিয়েই বড় হবে। কিন্তু একজন শিশুর অধিকার থাকা উচিত, সে ধর্মগুলো সম্পর্কে জানবে, বুঝবে, যাচাই করবে। এরপরে যখন সে প্রাপ্তবয়ষ্ক হবে, তখন বুঝে শুনে নিজের যুক্তি বুদ্ধি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। বাবা মাযের ধর্মটিই যদি তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়, তাকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ না দেয়া হয়, তাহলে সেটি তার অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে।

হয়তো তার বাবা মা ইহুদি ধর্মের, কিন্তু সে যাচাই বাছাই করার পরে তার জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে যদি মনে করে ইসলাম সত্য, তাহলে তার এই অধিকার থাকা উচিত, সে ইসলাম গ্রহণ করবে। একই কথা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শিশুদের কাছে ওপর নিজের ধর্মবিশ্বাস চাপিয়ে দেয়া অন্যায়। তাদের যাচাই বাছাই করার সুযোগ দেয়া উচিত। কিন্তু মুসলিম ধর্মাবলম্বীগণ হিন্দু খ্রিস্টান বৌদ্ধ ইহুদিদের সন্তানদের ইসলামের শিক্ষা জানাতে চাইলেও, মুসলিম শিশুদের তারা অন্য কোন ধর্ম সম্পর্কে জানতে দিতে ইচ্ছুক নয় [28] –

Ruling on teaching false religions to children
217084
Publication : 07-06-2014
Question
Im a student, becoming a teacher in religion to teach children. I live in Europe, in a Christian country, but my studies teaches the five main world religions (Islam, Christianity, Judaism, Hinduism and Buddhism). I’ve never thought that it could be haram to teach other religions to children, because I don’t see non-Islamic religions as the truth and I will never tell it is. I believe children need to know what other people believe in this world.
However, many people have been telling me my studies are haram and it’s definitely haram to teach to other children, especially muslim children. I’ve been searching, but I couldn’t find any source clarifying anything. I hope you can clarify it. Thank you very much in advance!
Answer
Praise be to Allah.
The basic principle is that it is not permissible to study or teach the distorted Scriptures, false religions or schools of thought that are contrary to the truth, unless that is done with the aim of teaching people that they are corrupt and false, and that they are contrary to reason and common sense, and contrary to the religion of truth which Allah, may He be glorified, has chosen for His slaves, namely Islam. In addition to that, the one who is studying that should also have sound knowledge of the truth and the ability to distinguish truth from falsehood, error from right guidance, and there should be no fear that he will be tempted or confused by that. This kind of study should be limited to specialists who it is hoped will play a role in combatting these distorted and devilish religions; the door should not be left open to everyone, especially the common folk and children, lest that create in them doubts and uncertainty about their religion. It says in Haashiyat Ibn ‘Aabideen (1/175): We were instructed not to look into any of that, whether it was transmitted to us by the disbelievers or by those among them who became Muslim. End quote.
In Kashshaaf al-Qinaa‘ ‘an Matn al-Iqnaa‘ (1/434) it says: It is not permissible to read the books of the People of the Book – this was stated by Imam Ahmad – because the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) got angry when he saw ‘Umar carrying a page of the Torah, and he said to him: “Are you doubting, O son of al-Khattab?” … It is not permissible to read the books of those who follow innovation or the books that contain both truth and falsehood, or to narrate them, because that comes under the heading of corrupting beliefs. End quote.
Al-Haafiz Ibn Hajar (may Allah have mercy on him) said, when discussing this issue – namely reading the books of the People of the Book: With regard to this issue, it is more appropriate to differentiate between the one whose faith is not deeply-rooted, in which case it is not permissible for him to read any of those books, in contrast to the one whose faith is deeply rooted, for whom it is permissible to do so, especially when there is a need to refute the arguments of those whose view is opposed to the truth. That is indicated by the fact that the imams (leading scholars) of the past and present quoted from the Torah and challenged the Jews to believe in Muhammad (blessings and peace of Allah be upon him) on the basis of what they quoted from their books. If they did not believe that it is permissible to read it, they would not have done that and they would all have reiterated this view.
End quote from Fath al-Baari by Ibn Hajar, 13/525
Shaykh Ibn Baaz (may Allah have mercy on him) was asked: Is it permissible for us to read the books of religions other than Islam, out of a desire to study and learn about other religions? He replied: That is not appropriate. It is not appropriate to read the Torah or the Gospel or any other books, because that may lead to doubt, and it was narrated from the Messenger (blessings and peace of Allah be upon him) that when he saw ‘Umar reading a page of the Torah, he said: “Are you doubting, O son of al-Khattab? I have brought it to you white and pure; if Moosa were alive he could not but follow me.” What is meant is that the Muslim should not read other books, such as the Torah, the Gospel or any others, except in the case of those who need to read them, such as scholars who want to refute the Jews and Christians from their own books. If there is a need to do so, the scholar who is refuting them and highlighting their falsehood may read their books so that he may refute them on that basis. In that case there is nothing wrong with doing that when there is a need for it, in the case of those who have knowledge and insight.
End quote from the Shaykh’s website
http://www.binbaz.org.sa/mat/10748
If this is the ruling for adults, then it is more applicable in the case of children, because their reasoning is still immature, so teaching them these religions is a wrong action in which there is nothing good. You will never be allowed, whilst teaching, to criticize these false religions and highlight their falseness; even if this is allowed, children will never be able to understand that, because specious arguments and refutation thereof will be above their level of understanding.
And Allah knows best.

এই উত্তরটির কিয়দাংশের অনুবাদ নিচে দেয়া হলো। অনুবাদকঃ ফারহান চৌধুরি।

শিশুদের মিথ্যা ধর্ম শিক্ষা দেয়ার বিষয়ে নীতিমালা
প্রশ্ন
আমি একজন ছাত্র, শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য ধর্মের একজন শিক্ষক হচ্ছি। আমি ইউরোপে থাকি, একটি খ্রিষ্টান দেশ, কিন্তু আমার পাঠ্যক্রমে আছে বিশ্বের প্রধান পাচঁটি ধর্ম (ইসলাম, খ্রিষ্টান, ইহুদী, হিন্দু এবং বৌদ্ধ)। আমি কখনো ভাবিনি যে, শিশুদের অন্য ধর্ম শিক্ষাদান ক্ষতির কারণ হতে পারে, কারণ আমি ইসলাম বাদে অন্য ধর্ম গুলোকে সত্য বলে মনে করিনা এবং আমি কখনো বলবও না এটা। আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীর অন্য মানুষেরা কি বিশ্বাস করছে সেটাও শিশুদের জানা উচিত।
যাইহোক, অনেক মানুষই আমাকে বলছে যে আমার পড়ালেখার বিষয়টি হারাম এবং অন্য শিশুদের শিক্ষা দেয়াটাও অবশ্যই হারাম, বিশেষত মুসলিম শিশুদের। আমি অনুসন্ধান করছি, কিন্তু ব্যাখ্যা দেয়ার মত স্পষ্ট কোনো উৎস পাইনি। আশা করছি আপনি বিষয়টি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন। অগ্রিম ধন্যবাদ।
উত্তর
সকল প্রশংসা আল্লাহর।
মৌলিক নীতি হচ্ছে যে, বিকৃত ধর্মগ্রন্থ, মিথ্যা ধর্ম অথবা যে সকল চিন্তা সত্যের পরিপন্থী তা পড়া বা শিক্ষাদানের অনুমতি নেই, যদিনা তা নীতি বহির্ভূত বা মিথ্যা হিসেবে মানুষকে বুঝানোর উদ্দেশ্যে শিক্ষা দেয়া হয় এবং যা তর্ক ও সাধারণ চিন্তার পরিপন্থী, এবং সত্য ধর্ম যার নাম ইসলাম, এর পরিপন্থী যা কিনা স্বয়ং আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের জন্য মনস্থ করেছেন। আরও বলা যায়, যে ব্যক্তি এ বিষয়ে পড়ছেন তার অবশ্যই সত্য সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকতে হবে এবং মিথ্যা থেকে সত্যকে আলাদা করার এবং সত্যপথ থেকে ভুলকে পার্থক্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে, এবং সেসব জ্ঞান দ্বারা প্রলোভিত বা দ্বিধান্বিত হওয়ার কোনো ভয় থাকা যাবেনা। এ ধরনের শিক্ষা অবশ্যই শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞদের জন্য নির্ধারিত হতে হবে যারা এসব বিকৃত এবং শয়তান ধর্মের সাথে যুদ্ধ করবে বলে আশা করা যায়; এ শিক্ষার দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত নয়, বিশেষত সাধারণ জনগণ ও শিশুদের জন্য যেন ধর্ম সম্বন্ধে তাদের মনে কোনো সন্দেহ বা অনিশ্চয়তার জন্ম না নেয়।
হাশিয়াত ইবনে ‘আবিদান হতে বর্ণিত (১/১৭৫)ঃ ” এসব বিষয়ে লক্ষ্য না দেয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যদিও তা অবিশ্বাসী বা তাদের মধ্যে যারা মুসলিম হয়েছে তাদের কাছ থেকে এসে থাকে।”
কাশশাফ আল-কিনা’ ‘আন মাতন আল-কিনা(১/৪৩৪) হতে বর্ণিতঃ বিধর্মীদের বই পড়ার কোনো অনুমতি নেই – এ উক্তিটি করেছেন ইমাম আহমেদ – কারণ নবী (সাঃ) একদা রেগে গিয়েছিলেন যখন তিনি উমর’ কে তাওরাতের একটি পৃষ্ঠা বহন করতে দেখেন, এবং তিনি তাকে বলেনঃ ” তুমি কি সন্ধেহের বশবর্তী হয়েছ, ইবন খাত্তাব?”….. যারা নতুন কিছুকে অনুসরণ করে তাদের বই পড়া বা তিলওয়াতের অনুমতি নাই এবং সে সব বই যাতে সত্য ও মিথ্যা উভয়ই আছে, কারণ সেসব আসে কলুষিত বিশ্বাস থেকে।’
আল হাফিজ ইবনে হাজর (র) হতে বর্ণিত, এই বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় – অর্থাৎ বিধর্মীদের বই পড়া বিষয়ে বলেনঃ এই সমস্যা বিবেচনায়, যাদের বিশ্বাস গভীর নয় তাদের এসব হতে আলাদা করাই উচিত, এক্ষেত্রে তার জন্য এসব বই পড়ারই কোনো অনুমতি নেই, অপরপক্ষে যাদের গভীর বিশ্বাস আছে, তার জন্য এর অনুমতি আছে, বিশেষত যখন যাদের অভিমত সত্যের বিরোধী তাদের যুক্তি খন্ডনের প্রয়োজন হয়। এটি সত্য দ্বারা নির্দেশিত যে, অতীত এবং বর্তমানের ইমামগণ (বিশিষ্ট আলেমগণ) ইহুদীদের মুহাম্মদ (সাঃ) সম্বন্ধে বিশ্বাস করানোর জন্য তাওরাত হতে উদ্ধৃতি দিয়েছেন যখন তারা তাদের বই থেকে উদ্বৃত্ত করেছে। যদি তারা এটা পাঠের অনুমতি আছে বলে বিশ্বাস করত না, তবে তারা এমনটি করত না এবং তারা এই মতের পুনরাবৃত্তি করত।
শেষ উক্তিটি ফাত আল-বারী হতে বর্ণিত, ১৩/৫২৫।

মারপিট করে ধর্ম পালনে বাধ্য করা

একটি শিশু আসলে কোন ধর্ম সত্য আর কোন ধর্ম মিথ্যা, এরকম বড় সিদ্ধান্তে যাওয়ার মত যথেষ্ট পরিপক্ক নয়। তাকে তার মা বাবা যা শেখাবে, সে সেটিই শিখবে। কিন্তু সে জেনে বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়ার বয়সে পৌঁছাবার আগেই, ইসলাম আসলে তাকে বাধ্য করে ধর্ম স্বীকার করে নেয়া এবং পালন করতে। সুন্নতে খতনার কথা এখানে উল্লেখ্য। এই কাজটি শিশুর কনসেন্ট বা সম্মতি না নিয়েই করা হয়। সভ্য সমাজে কারোর সম্মতি ছাড়া তার অঙ্গ হানি করা একটি অপরাধ। সেই সাথে, হাদিসে উল্লেখ আছে, বাচ্চারা নামাজ না পড়লে মুহাম্মদ তাদের পেটাতে নির্দেশ দিয়েছেন [29] [30] –

সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায)
৪৯৫. মুআম্মাল ইবনু হিশাম …………. আমর ইবনু শুআয়েব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা এবং দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের সন্তানরা সাত বছরে উপনীত হবে, তখন তাদেরকে নামায পড়ার নির্দেশ দেবে এবং তাদের বয়স যখন দশ বছর হবে তখন নামায না পড়লে এজন্য তাদেরকে মারপিট কর এবং তাদের (ছেলে-মেয়েদের) বিছানা পৃথক করে দিবে।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)

সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায)
৪৯৪. মুহাম্মাদ ইবনু ঈসা …….. আবদুল মালিক থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা এবং তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সন্তানদের বয়স যখন সাত বছর হয়, তখন তাদেরকে নামায পড়ার নির্দেশ দাও এবং যখন তাদের বয়স দশ বছর হবে তখন নামায না পড়লে এজন্য তাদের শাস্তি দাও- (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)

মুরতাদের শাস্তির বিধান

ইসলাম যে কোন প্রকার যাচাই বাছাই করার সুয়োগ না রেখে জোর করে ইসলামকে চাপিয়ে দেয়, বিশ্বাস করতে বাধ্য করে, ভয় দেখায় বা আতঙ্ক সৃষ্টি করে, সেটি আরো পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় ইসলামে মুরতাদের শাস্তির বিধান আলোচনায় আনলে। যদি কাউকে বলা হয়, এই দলটি ত্যাগ করলে হত্যা করা হবে, তখন আসলে সেই দলটির বক্তব্য সত্য নাকি মিথ্যা, ভাল নাকি মন্দ তা আসলে গুরুত্বহীন হয়ে যায়। কারণ তাতে তো আসলে দলটির মতাদর্শ গ্রহণ বা বর্জনের কোন সুয়োগ রাখা হলো না। বিশ্বাস মানুষের মনের ব্যাপার। যার বিশ্বাস হয় সে বিশ্বাস করে, যার বিশ্বাস হয় না তাকে জোর করলেও তার মধ্যে বিশ্বাস আসে না। আর মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে কেউ জিজ্ঞেসও করে না, তুমি কোন ধর্মটি বেছে নিবে? মানে, মতামত না দিয়েই, নিজে দেখেশুনে বুঝে পছন্দ করার বয়সে পৌঁছাবার আগেই একজন মানুষ মুসলমান হয়ে যায়। কিন্তু পরে যদি তারা ইসলাম ত্যাগ করতে চায়? সে যদি অন্য কোন ধর্ম বেছে নিতে চায়? বা সে যদি নাস্তিক হয়ে যায়? ইসলাম ধর্মে ধর্ম ত্যাগের শাস্তি কী? এই বিষয়ে শরীয়তের বিধান কী? আসুন নিচের হাদিসগুলো থেকে জেনে নিই। প্রথমে প্রখ্যাত ইসলামিক আলেম মাহমুদুল হাসান গুনভীর একটি বক্তব্য শুনে নিই,

এবারে আসুন কিছু হাদিস পড়ে নিই [31] [32] –

সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান‏
৪৩০০. আহমদ ইব্‌ন মুহাম্মদ (রহঃ) — ইকরাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী (রাঃ) ঐ সব লোকদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন, যারা মুরতাদ হয়েছিল। এ সংবাদ ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পৌছলে, তিনি বলেনঃ যদি আমি তখন সেখানে উপস্থিত থাকতাম, তবে আমি তাদের আগুনে জ্বালাতে দিতাম না। কেননা, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোময়া আল্লাহ্‌ প্রদত্ত শাস্তির (বস্তু) দ্বারা কাউকে শাস্তি দেবে না। অবশ্য আমি তাদেরকে আল্লাহ্‌র রাসূলের নির্দেশ মত হত্যা করতাম। কেননা, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কেউ দীন পরিত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়, তবে তোমরা তাকে হত্যা করবে। আলী (রাঃ) ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর এ নির্দেশ শুনে বলেনঃ ওয়াহ্‌! ওয়াহ্‌! ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) সত্য বলেহছেন। আর ইহাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান‏
৪৩০১. আমর ইব্‌ন আওন (রহঃ) —- আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহ্‌র রাসূল”। তবে তিনটি কারণের কোন মুসলমানের রক্ত প্রবাহিত করা হালালঃ (১) যদি কোন বিবাহিত ব্যক্তি যিনা করে; (২) যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তবে এর বিনিময়ে হত্যা এবং (৩) যে ব্যক্তি দীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলমানের জামায়াত থেকে বেরিয়ে যায়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আসুন, সহি বুখারী গ্রন্থ থেকে সরাসরি হাদিসগুলো যাচাই করে নিই [33] [34] –

যাচাই 28
যাচাই 30

এবারে আসুন দেখি, প্রখ্যাত হাদিস প্রনেতা ইমাম মালিকের মুয়াত্তা ইমাম মালিক গ্রন্থ থেকে মুরতাদের শাস্তি কী হতে পারে তা জেনে নিই। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশ হওয়া মুয়াত্তা ইমাম মালিক দ্বিতীয় খণ্ডের ৪০৬, ৪০৭ নম্বর পৃষ্ঠায় হাদিসটি পাবেন।[35] –

যাচাই 32
যাচাই 34

সেইসাথে, আরো অমানবিক ব্যাপার হলো, মুরতাদকে কেউ হত্যা করলে তার জন্য হত্যাকারীর ওপর মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ হবে না। বিষয়টি সন্নিবেশিত আছে বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন খণ্ড ১ এ [36] –

যাচাই 36

একই সাথে, মুরতাদের বিষয় সম্পত্তিও জবরদখল করা হবে, তেমনটিই বলা আছে ইসলামিক আইনে [37] –

যাচাই 38

উপসংহার

উপরের আলোচনা থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট যে, ইসলাম মৌলিকভাবেই একটি জোরপুর্বক চাপিয়ে দেয়ার ধর্ম। এখানে যাচাই বাছাই গ্রহণ বর্জন যুক্তি প্রমাণ তথ্য উপাত্ত দিয়ে দেখে শুনে বুঝে দেখাকে নয়, বরঞ্চ অন্ধভাবে ইসলামের বিশ্বাসকে আকড়ে ধরাতেই জোর দেয়া হয়। যদি কেউ যাচাই করে দেখে এই ধর্মটিকে মিথ্যা বলে মনে করে ধর্মটি ত্যাগ করে, তাহলে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। যা একজন ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কারো গলায় ছুরি ধরে যদি ভোট দিতে বলা হয়, তাহলে সেই ভোটটি সে দেখে শুনে বুঝে দিয়েছে, এমন আর দাবী করার সুযোগ থাকে না। ইসলামও একইভাবে মানুষের গলায় ছুরি ধরে রাখে, যার কারণে সকল প্রকার প্রভাব মুক্ত হয়ে স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার আর কোন সুযোগ থাকে না। এই কারণেই বলা যায়, ইসলাম যাচাই বাছাই করার ধর্ম নয়, বরঞ্চ জোর করে চাপিয়ে দেয়ার ধর্ম।

তথ্যসূত্রঃ

  1. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ১১১ []
  2. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৬৪২ []
  3. সূরা মায়িদা, আয়াত ৫১ []
  4. কোরআন সূরা ইমরান, আয়াত ৮৫ []
  5. হাদীস সম্ভার, হাদিস নম্বরঃ ৩৭৯৭ []
  6. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪৬০৩ []
  7. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ৪৩ []
  8. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৬৪ []
  9. তাফসীরে জালালাইন, প্রথম খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা, পৃষ্ঠা ৭৭ []
  10. তাফসীরে জালালাইন, প্রথম খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা, পৃষ্ঠা ৭৮-৭৯ []
  11. সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২১৩৬ []
  12. সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৩০৪৬ []
  13. সহীহ বুখারী (তাওহীদ), হাদিস নম্বরঃ ৩২৭৬ []
  14. শারহুল আক্বীদা আত-ত্বহাবীয়া, লেখক : ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী, প্রকাশনী : মাকতাবাতুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৩২৮ []
  15. আল-ফিকহুল আকবর (বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা), ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ, আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা ১৪৮-১৫৪ []
  16. সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ২৫২ []
  17. রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), হাদিস নম্বরঃ ১৩৯৯ []
  18. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ১৬৪ []
  19. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৮১০ []
  20. বোখারী শরীফ (বাংলা তরজমা ও ব্যাখ্যা), খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১০ []
  21. শারহুল আক্বীদা আত-ত্বহাবীয়া, লেখক : ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী, প্রকাশনী : মাকতাবাতুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৩৩৩ []
  22. হাদীস সম্ভার, হাদিস নম্বরঃ ১৫০৭ []
  23. হাদীস সম্ভার, হাদিস নম্বরঃ ১৫০৬ []
  24. حكم القراءة في كتب الأديان []
  25. Ruling on studying the books of the People of the Book for the purpose of da‘wah (calling them to Islam), and the ruling on studying comparative religion. []
  26. How ‘Umar read the Torah []
  27. ফতোয়ায়ে আরকানুল ইসলাম, শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেদ আল উসাইমীন, পৃষ্ঠা ১৬৯ []
  28. Ruling on teaching false religions to children []
  29. সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ), হাদিস নম্বরঃ ৪৯৫ []
  30. সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ), হাদিস নম্বরঃ ৪৯৪ []
  31. সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) হাদিস নম্বরঃ ৪৩০০ []
  32. সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) হাদিস নম্বরঃ ৪৩০১ []
  33. সহিহ বুখারী খণ্ড ৫ পৃষ্ঠা ২৩৬ []
  34. সহিহ বুখারী খণ্ড ১০ পৃষ্ঠা ২৬১ []
  35. মুয়াত্তা ইমাম মালিক, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৬, ৪০৭. ডাউনলোড লিঙ্ক []
  36. বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৭ []
  37. বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪৬ []

You may also like

Solverwp- WordPress Theme and Plugin

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?
-
00:00
00:00
Update Required Flash plugin
-
00:00
00:00